আজ-  ,


সময় শিরোনাম:

মানুষকে যিনি ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন তিনি-ই মানুষের পরম সত্তা মহান আল্লাহ

মানুষকে যিনি ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন তিনি-ই মানুষের পরম সত্তা মহান আল্লাহ

-মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী

(১)
সাত আসমানে বেষ্টনী গঁড়ে মহাকাশের শত সহস্র গ্রহ উপগ্রহ নক্ষত্র সূর্য চন্দ্র বৃহস্পতি শুক্র মঙ্গল গ্যালাক্সি ওয়ে শূন্য থেকে মহাশূন্য! তারই মাঝে মানুষের বসবাস উপযোগী একটি ধরণীর বুকে আদম হাওয়ার আবির্ভাব।

ধরণীর বুকে মানুষ আগমনী বার্তা পৌঁছে যায় সমগ্র মহাবিশ্বের সর্বত্র। এখানে সম্ভবত মানুষের আগে অসংখ্য ভয়ংকর প্রাণীর বসবাস ছিল। জীন জাতির আবাস ছিল দীর্ঘকাল! যারা হয়তো বা খোদার নাফরমানীতে হয়ে গেছিল মহা উল্লাসে লিপ্ত!

মহান আল্লাহ জীন-ইনসানকে সৃষ্টি করেন কেবল তাঁর এবাদতের জন্য! বিচার হবে কেবল-ই মানুষ আর জীন জাতির! অন্য সকল জীবজন্তু জ্ঞান বুদ্ধি বিবেক বিবেচনা বহির্ভূত! তাই তাদের জন্য পরকাল, অনন্তকাল, মহাকাল জীবনকাল! কোন কাল নেই!

আদম সৃষ্টির জন্য মাটির প্রয়োজন! সকল ফেরেস্তা ব্যর্থ মাটি নিতে! আজরাইল (আ.)কে হুকুম দিলেন ধরণীর বুক চিরে তোমাকে মাটি আনতে হবে! ধরণীর কোন কান্নায় হৃদয় গলেনি আজরাইলের! মাটি নিয়ে গেলেন খামচা মেরে! আগুনে পুঁড়িয়ে পানি বাতাস মিশিয়ে তৈরী করলেন মানুষ আদম (আ.) এর দেহ!

জীনের উস্তাদ আজাজিল শ্রদ্ধা নিবেদনে করে অস্বীকৃতি। তাই তাকে নাম দেয়া হলো শয়তান! শয়তান প্রার্থনা করে চেয়ে নিলো আদম সন্তানের রক্ত শিরায় চিত্তে মননে ঢুঁকে বিভ্রান্ত করার ক্ষমতা! মহান আল্লাহ তাকে সেই শক্তি সামর্থ্য দিয়ে দিলেন মানুষকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে! অবশেষে গুন্দুম খাওয়ার অপরাধকে অজুহাত দেখিয়ে আদম-হাওয়াকে ধরণীতে পাঠানো হলে তাদের বংশধর হিসেবেই মানুষ জাতির আগমন।

আমরা সাধারণ বলে থাকি মাটির মানুষ! কিন্তু মহান আল্লাহর ঘোষণা পবিত্র ঐশীগ্রন্থ কুরআন মজিদের প্রথম অধ্যায়ে তিনি বলেন “আমি মানুষকে বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছি”। এ বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞান একই কথা বলে। মহান আল্লাহ বলেন, “আমি মানুষকে কলমের সাহায্যে শিক্ষা দীক্ষা দান করি”। সত্যি-ই তো আমারা লেখালেখি করছি হাতে কলমে শিক্ষা দীক্ষা অর্জন করে।

(২)
পৃথিবীর সকল জীবজন্তু প্রকৃতিগত ভাবে তাদের কন্ঠে
ন্যাচারালি প্রাকৃত ভাষা শিক্ষা করে নিতে কারো কাছে থেকে শিক্ষাদীক্ষা নিতে হয় না। পশু-পাখির ভাষা আরেক পশু-পাখি বুঝতে পারে, যা মহান আল্লাহ-ই তাদেরকে শিখিয়ে দিয়েছেন প্রকৃতিগত ভাবে।

শেয়াল গান গায় রাতের বেলা, পাখি গান গায় দিনের বেলা! কুকিল কত সুন্দর সুরে গান গাইতে পারে, ময়না, টিয়া, শালিক, চন্দনা, ফ্যালকন সহ হরেক রকমের পাখি গান গায় দিনের বেলা, আবার রাতের বেলা ও ডাহুক পাখি গান গায়, বন্যপ্রাণীর ভাষা আরেক পশু বুঝতে পারে। কোন পশু পাখির ভাষা শিক্ষাদীক্ষা অর্জন করতে হয় না কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

আবার কিছু কিছু পশু পাখিকে মানুষ পোষ মানিয়েছে। গৃহে লালন পালন করে। গরু, মহিষ, ঘোড়া, উট, গাদা ও হাতির সাহায্যে অনেক অনেক কাজ-কর্ম আদায় করে ছাড়ছে মানুষ। চাষাবাদ, পরিবহন, যুদ্ধ ক্ষেত্রে ব্যবহার, তেলের ঘানিতে ব্যবহার, ইটের মশলা তৈরীতে ব্যবহার, খাদ্য শস্য, যুদ্ধ সামগ্রী, ব্যবসায়ী পণ্য ও অন্যান্য মালামাল পরিবহনে কাঠের গাড়ি ব্যবহার করে আসছে মানুষ হাজার হাজার বছর আগে থেকে। বর্তমানেও পৃথিবীর যে সব মরু অঞ্চলে এবং পাহাড়ি এলাকায় গাড়ি চলাচল হচ্ছে না, সে সব এলাকায় বিভিন্ন পশুর মাধ্যমে মালামাল পরিবহন করাচ্ছে মানুষ।

তাই তো মহান আল্লাহ জগতের সকল পশু পাখির উপর
মানুষের কর্তৃত্ব দান করেছেন। এক আমলে নাকি গরুর ভাষা মানুষ বুঝতে পারতো এবং গরু প্রতিবাদ করতে পারতো! অবশেষে গরুর কন্ঠে মানুষে বুজবার মতো ভাষা মহান আল্লাহ বন্ধ করে দেন।

পশু পাখি ব্যবহার করে মানুষ পশু পাখি ধরে খায়। ফ্যালকন, টিয়া, ময়না, শালিক, ঈগল প্রভৃতি পাখি পোষ মানিয়ে বিভিন্ন ভাষা এবং গান শিখাচ্ছে এই মানুষ। কুকুর, হাতি এমনকি বাঘ, ভালুক, সিংহ ছানাকে পোষ মানিয়েছে এই মানুষ। এককালে ডাক বিভাগের কাজে কবুতর পাখি ব্যবহার করতো মানুষ। এই চ্যাপ্টার লিখতে গেলে বেশ লম্বা হবে, তাই আর নয়।

(৩)
বিচিত্র সত্তার অধিকারী হচ্ছে মানুষ ও জীন জাতি! মানুষ এবং জীন জাতিকে শিক্ষা দীক্ষা নিতে হয়, ভাষা প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন করতে হয় কঠোর সাধনা করে। তাই তো মানুষের জন্য রয়েছে শিক্ষা দীক্ষা অর্জনের লক্ষ লক্ষ প্রতিষ্ঠান। যেখানে জীন জাতি ও মানুষের রূপ ধারণ করে শিক্ষা দীক্ষা অর্জন করে থাকে সময়ে সুযোগে।

মানুষ ও জীন জাতির শিশুরা যে দেশে জন্ম নেয় সেই দেশের মৌখিক ও মৌখিক ভাষা অতি সহজে শিখিয়ে নিতে সক্ষম হবে যায়। মানব শিশুর প্রথম শিক্ষা দীক্ষা অর্জন হয় তার মা বাবা ও পরিবার পরিজনের কাছে। অথবা কোন শিশু অন্য কোন পালনকর্তা কিংবা এতিমখানায় ছোট থেকে বড় হলো, অন্যের শিখানো মুখের ভাষা শিখে নেয়।

(৪)
একমাত্র মানুষ জাতিকে শিক্ষা দীক্ষা শিখাতে মহান আল্লাহ শতাধিক পুস্তিকা (ছহিফা) এবং চারখানা বিশাল আসমানী কিতাব নাজিল করেছেন। মানুষের মৌখিক ভাষা ও মৌখিক ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন তিনি সেই সব ছহিফা বা পুস্তিকার মাধ্যমে এবং শেষে ভাষার উৎকর্ষ সাধন করতে পাঠিয়েছেন
একে একে চারটি আসমানী কিতাব!

যার মধ্যে মুসা নবীর কাছে তাওরাত কিতাব, দাউদ পয়গাম্বরের কাছে জবুর কিতাব, ঈশা পয়গম্বরের কাছে ইনজিল বা বাইবেল কিতাব এবং মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (দ.) এর কাছে কুরআন বা ফুরকান। প্রত্যেক মুসলমানকে সাতটি গভীর বিশ্বাস এর মধ্যে আসমানী কিতাব সমূহের উপর বিশ্বাস, নবী রাসুলেদের উপর বিশ্বাস! কিন্তু কতিপয় মুসলমান সেসব কথা ভুলে কেবলই বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন!

(৫)
মানুষের ভাষা যিনি শিক্ষাদীক্ষা দান করেছেন তিনি-ই মানুষের পরম সত্তা মহান আল্লাহ! মানুষ শিশু অবস্থায় মায়ের কূলে দোলে দোলে সুরের সঙ্গে ও ও ওয়া ওয়া মাম মাম দাদ দাদ হি হি পু পু নান নান উ উ শে শে রে রে বাব বাব বাব ইত্যাদি ন্যাচারালি বলতে পারে! পরে তার মা বাবা যে ভাষায় কথা বলা শিখায়, সে ভাষাতেই কথা বলা শিখে নেয়।

এরপরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাতে কলমে যে যে ভাষার বর্ণমালা লিখতে শিক্ষা দিবে, সেই ভাষায়-ই লিখতে আঁকতে শিখে, লিখার ভাষায় কথা বলা শিখে। তারপর উচ্চ শিক্ষা দীক্ষা অর্জন করতে দেশের এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা এবং লেখালেখি করা শিখে, ভাষা প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন করে মহাপণ্ডিত মহাজ্ঞানী হয়ে যায়।

মানুষের মৌলিক ভাষা হচ্ছে ঈশারা ঈঙ্গিতের ভাষা। লেখালেখি আঁকাআকির ভাষা এবং মুখে উচ্চারণ করে মৌখিক ভাষা। ঈশারায় বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করে সুদীর্ঘকাল থেকে। পুলিশ ট্রাফিক সিগনাল দেয় হাতের ঈশারায়, বিমান চলে স্টাফদের হাতের ঈশারায়, যুদ্ধের ময়দানে সেনাপতি নির্দেশ করে হাতের ঈশারায়। বক্তারা তাদের হাতের ঈশারার আড়ালে অনেক কিছু বুঝান।

লেখালেখি, হস্তশিল্প, চারুকলায়, ভাষ্কর্যশিল্পে অনেক কিছু-ই প্রকাশ পায়। লেখালেখি আঁকাআকি করতে কলমের প্রয়োজন! তাই তো মহান আল্লাহ ঐশীগ্রন্থ কুরআন মজিদে সুস্পষ্ট বর্ণনা- তিনি কলমের সাহায্যে মানুষকে ইলম বা বিদ্যাশিক্ষা দান করেন। কারণ লেখার ভাষায় বিশ্বের সকল রাষ্ট্র চলে। লেখার ভাষায় আইন আদালত চলে। লেখার ভাষায় সকল প্রতিষ্ঠান চলে। লেখার ভাষায় প্রতিটি মানুষের দুইজন ফেরেস্তা দৈনন্দিন জীবনের আমলনামা লিখেন। যে কারণে নামাজ আদায় করে তাদেরকে সালাম জানিয়ে নামাজ শেষ করা ফরজ।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত কলম আল্লাহর হুকুমে সারা বিশ্বের মহাবিশ্বের এবং সমগ্র সৃষ্টি জগতের সকল নির্দেশনা ঐশ্বরিক শক্তিবলে লিখে চলছে।

জয় হোক মহান আল্লাহর। জয় হোক ঐশী কলমের। জয় হোক জগতের ঈশ্বর প্রেমী সকল ভাষাভাষী সকল ধর্মের সকল বর্ণের কবি লেখকদের।
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ইং, সাহিত্য কুটির সিলেট।
অনুলিখন: স’লিপক।

মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীঃ কবি, চেয়ারম্যান- বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাব।