রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও নন্দিত বংশীবাদক বারী সিদ্দিকীকে। গতকাল রোববার রাতে টেলিফোনে তার বড় ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী সমকালকে বলেন, লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন বাবা। তার অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। আপনারা সবাই বাবার সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন। এদিকে গতকাল বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বারী সিদ্দিকীর ত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় বিনোদন অঙ্গনের বেশ কজন তারকা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বারী সিদ্দিকীর মৃত্যুর খবর জানান, যা শুনে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিল্পীর পরিবারের সদস্যরা। সাব্বির সিদ্দিকী বলেন, বাবার অবস্থা আগের মতো নেই। তিনি লাইফ সাপোর্টে থাকলেও ডাক্তার বলেছেন, আপনারা দোয়া করেন। এ ছাড়া আপাতত কিছু করার নেই। দেশের বাইরেও তার আর কোনো চিকিৎসা নেই। গেল দুই বছর ধরে তিনি কিডনি ডায়ালাইসিস করে চলছেন। যদিও এতদিন তিনি কাউকে সেটা বুঝতে দেননি। তিনি নিজের কষ্টের কথা আমাদের সহজে বলতে চাইতেন না। এখন যে অবস্থায় আছেন, তাতে আমাদের সবার দোয়াই তাকে ফিরিয়ে আনতে পারে স্বাভাবিক জীবনে। এর বিকল্প নেই।১৭ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে বারী সিদ্দিকীকে। সেদিন মধ্যরাতে তার মেজর হার্ট অ্যাটাক করে। অচেতন অবস্থায় দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পরই কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে লাইফ সাপোর্ট দেন। এদিকে চিকিৎসকদের মতে, বারী সিদ্দিকীর দুটি কিডনি অকার্যকর। বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের প্রবাদপ্রতীম শিল্পী বারী সিদ্দিকী। গানের পাশাপাশি বংশীবাদক হিসেবেও বিখ্যাত নেত্রকোনার এ শিল্পী। দীর্ঘদিন সঙ্গীতের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তিনি বিপুল পরিসরে পরিচিতি পান ১৯৯৯ সালে। হুমায়ূন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিন ছবিতে তার গাওয়া ছয়টি গানই অসাধারণ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তার গাওয়া গান নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কটি অডিও অ্যালবাম। বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর নেত্রকোনায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের কাছে গান শেখায় হাতেখড়ি তার। মাত্র ১২ বছর বয়সে নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের তত্ত্বাবধানে তার আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এরপর তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণী শিল্পীর সান্নিধ্য লাভ করেন। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ওপর তালিম নেন বারী সিদ্দিকী। পরে বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠলে তার ওপরও প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৯৯ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিংশ বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে তিনি অংশগ্রহণ করেন।