প্রতিনিধি ও তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল রোববার কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তারা রোহিঙ্গাদের কাছে অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা শোনেন। এসব মানুষকে নিজ দেশে ফেরানোর বিষয়টি তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জোরালোভাবে তুলে ধরবেন বলে বাংলাদেশের সংশ্নিষ্টদের জানিয়েছেন। এ ছাড়া আলোচনার মাধ্যমে বিপুল এই জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নাগরিকত্ব দিয়ে মিয়ানমার শিগগির ফিরিয়ে নেবে বলে তারা আশা করেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি কক্সবাজারের উদ্দেশে তেজগাঁও বিমানঘাঁটি ত্যাগ করে। তারা কক্সবাজারে পৌঁছে উখিয়ার বালুখালী ও কুতুপালংসহ বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রতিনিধি দলটি নির্যাতনের শিকার কিছু রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন। বিকেলে অতিথিদের নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ফেরেন আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
প্রতিনিধি দলে রয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেদেরিকো মঘেরিনি, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগট ওয়ালস্টার ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো। তাদের সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিবসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কর্মকর্তারা।
ক্যাম্প পরিদর্শনকালে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গ্যাব্রিয়েল বলেন, অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা তাদের দেশ থেকে পালিয়ে আসার যে বিবরণ দিয়েছে, তা অত্যন্ত করুণ। এখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে যা দেখলাম, এত কম স্থানে এত বেশি মানুষের বসবাস এর আগে কোথাও দেখিনি। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের অবশ্যই পূর্ণ নাগরিকত্ব দিয়ে স্ব্বদেশে ফেরত নিতে হবে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ফোরামে জোরালোভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেদেরিকো মঘেরিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের যে বিবরণ এখানে শুনেছি, তা সত্যিই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। নির্মম পরিস্থিতির শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এখানে এ অবস্থায় তারা বেশি দিন থাকতে পারে না। তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে স্থান দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মিয়ানমার অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে। ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান আরও জানান, এই সংকট কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে ইয়াঙ্গুনে সাক্ষাৎকালে আলোচনা করবেন তিনি।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, আসেম সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ইস্যুতে জোর দাবি তুলবেন তারা। তারা বিশ্বাস করেন, মিয়ানমার অবশ্যই রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সার্বিক সহযোগিতার কথাও বলেছেন তারা।
এ দিন প্রতিনিধি দলটি কুতুপালং ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক অভিবাসন কেন্দ্র-আইওএমের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র, জরুরি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন কার্যক্রমও পরিদর্শন করেন।
বালুখালী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে আরও সাত শতাধিক রোহিঙ্গা :উখিয়া সীমান্তের আঞ্জুমানপাড়া শূন্যরেখায় তিন দিন ধরে অবস্থান করার পর অবশেষে সাত শতাধিক রোহিঙ্গা গতকাল সকালে বালুখালীতে আশ্রয় নিয়েছে। তারা মংডু সদর এলাকার মাঙ্গালাপাড়া
উখিয়ায় রোববার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
Catagory : আন্তর্জাতিক | তারিখ : November, 20, 2017, 2:46 pm