আজ-  ,


সময় শিরোনাম:
«» কমলগঞ্জের মিরতিংগা চা বাগানে অবস্থান কর্মসুচি ও প্রতিবাদ সভা «» ঢাকায় বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাব ১৬তম জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন উদযাপন কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত «» কমলগঞ্জ নৃত্যাচার্য নীলেশ্বর মুখার্জী’র ১৩৬তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন «» কমলগঞ্জে মণিপুরি বর্ণমালায় পরীক্ষা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা «» কমলগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃত্যু «» শমশেরনগর হাসপাতাল পরিবারে যুক্ত হলেন বৃটেন প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোফাসসিল আলম সোহেল «» বগুড়ায় ফেন্সিডিলসহ ২ জন গ্রেফতার «» মৌলভীবাজারে বিএনপি নেতা ভিপি মিজানুর রহমানসহ ১৪ নেতাকর্মী কারাগারে «» ন্যায্য মূল্যে পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চতকরণে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে «» মৌলভীবাজারে বিএনপি নেতা ভিপি মিজানুর রহমানসহ ১৪ নেতাকর্মী কারাগারে

“মসজিদের আইন” মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা একটি পবিত্র কাজ


নিয়ামুল হক (এডভোকেট): মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা একটি পবিত্র কাজ। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম মসজিদ নির্মাণ করেন হজরত আদম আলাইহিস সালাম। ওয়াকফ ছাড়া মসজিদ হয় না। হাদিসে বলা হয়েছে, হজরত ওসমান (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তার জন্য বেহেশতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।’ -মেশকাত: ৬৪৫। বাংলাদেশ একটি মুসলিম অধ্যাসিত দেশ, সেইজন্য অধিকাংশ মসজিদ গড়ে উঠেছে আমাদের দেশে। তাই মসজিদ নির্মাণ করার জন্য একটি আইন রয়েছে বাংলাদেশে সেটি হল ওয়াকফ অধ্যাদেশ ১৯৬২ যাহা দ্বারা বাংলাশেদের সকল মসজিদ পরিচালিত হয়। মসজিদ, মাদ্রাসা বা যে কোন ধর্মীয় প্রতিষ্টান নিমানের ১ম শত হল মসজিদের নামে জমি ওয়াকফ করা। কোনো সম্পদকে মালিক নিজের মালিকানা থেকে মুক্ত করে আল্লাহর সম্পত্তি ঘোষণা করে আল্লাহর উদ্দেশে জনসেবার জন্য উৎসর্গীকৃত কাজটিকে ওয়াক্ফ বলা হয়। এ হস্তান্তর সংঘটিত হয় স্বেচ্ছায় এবং এটি চিরস্থায়ী ও অপরিবর্তনীয়। ওয়াকফকৃত সম্পদ ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত হয়। এই ধরনের দানশীল ব্যক্তি ওয়াকিফ বা দাতা হিসাবে পরিচিত। মসজিদ পরিচালনার ক্ষেত্রে আলোচনার বিষয় হল (১) মোতাওয়াল্লী (২) মসজিদ কমিটি। এবার জেনে নেই মোতাওয়াল্লী কে বা তার কাজ কি এবং কমিটির বিষয়?
মোতাওয়াল্লী কে বা তার কাজ কি? মুসলিম আইন অনুসারে, ওয়াকফ সম্পত্তির দেখাশোনা ও পরিচালনার ভার যার ওপর মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে ন্যস্ত করা হয়, তাকে ‘মুতাওয়াল্লি বলে। ওয়াকফ সম্পত্তিতে মুতাওয়াল্লির কোনো ব্যক্তিগত অধিকার থাকে না, তিনি কেবলই ওয়াকফকৃত সম্পত্তির দেখাশোনা ও পরিচালনার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হন। ওয়াকফ সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনের জন্য ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধির বিধানাবলি কিংবা ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ কিংবা ১৪৬ ধারা অনুসারে নিযুক্ত রিসিভার অথবা আপাতবলবৎ কোনো আইনের বিধানাবলি অনুসারে কোনো ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনাকারী অভিন্ন ব্যবস্থাপক ওই অধ্যাদেশের অধীনে মুতাওয়াল্লি বলে গণ্য হবেন। কৃষি সম্পত্তির ক্ষেত্রে তিন বছর এবং কৃষিভূমি নয় এমন সম্পত্তির ক্ষেত্রে এক বছরের বেশি সময় পর্যন্ত ওয়াকফ সম্পত্তি ইজারা দেয়ার ক্ষমতা মুতাওয়াল্লির নেই। সুতরাং এই আইনানুসারে সাধারণত দুভাবে মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত হতে পারেন। প্রথমত ওয়াকফকারীর ইচ্ছা অনুসারে, দ্বিতীয়ত অন্য কোনো ক্ষমতাবান কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। যেহেতু লিখিত দলিলের সাক্ষ্যগত মূল্য অনেক বেশি, সে কারণে মুতাওয়াল্লির নিয়োগ লিখিত দলিলের মাধ্যমে হওয়াই ভালো।
যৌথ মোতাওয়াল্লী: যে ক্ষেত্রে কোন মসজিদে যৌথ বা একের অধিক মোতাওয়াল্লী থাকিবেন, সেক্ষেত্রে ৬৭ ধারা মোতাবেক অভয় একে অন্যর মতামতের ভিত্তিতে মসজিদের সকল কাজ সম্পাদন করবেন, এককভাবে কাজ করার আইনগত কোন সুযোগ নেই।
মোতাওয়াল্লীকে কি অপসারণ করা যায়? ওয়াকফ অধ্যাদেশের ৩২ ধারা অনুসারে বেশ কিছু ক্ষেত্রে একজন মুতাওয়াল্লিকে অপসারণ করা যায়। প্রশাসক নিজের ইচ্ছায়, অথবা যে কোনো ব্যক্তির আবেদনের ভিত্তিতে একজন মুতাওয়াল্লিকে বেশকিছু কারণে অপসারণ করতে পারেন। যেমন : (১)বিশ্বাস ভঙ্গ করে কিংবা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে কিংবা অবৈধ কার্যকলাপের মাধ্যমে অথবা অন্যায়ভাবে ওয়াকফ সম্পত্তি আত্মসাৎ? করলে; (২) মুতাওয়াল্লির কোনো কাজের কারণে ওয়াকফ সম্পত্তির কোনো ক্ষতিসাধন হলে, (৩) ওয়াকফ অধ্যাদেশের অধীনে মুতাওয়াল্লি একাধিকবার দন্ড-প্রাপ্ত হয়ে থাকলে, অথবা (৪) যদি বর্তমানের মুতাওয়াল্লি অনুপযুক্ত, অযোগ্য, অমনোযোগী অথবা অন্য প্রকারে অবাঞ্চিত বলে বিবেচিত হন। তবে মুতাওয়াল্লি অপসারণের ক্ষেত্রে আইনে বেশকিছু শর্তও দেয়া আছে। যেমন: কোনো মুতাওয়াল্লিকে এভাবে অপসারণ করার আদেশ দেয়ার আগে তাকে নিজের বক্তব্য রাখার সুযোগ দিতে হবে। মুতাওয়াল্লি তার অপসারণ আদেশের বিরুদ্ধে তিন মাসের মধ্যে জেলা জজ আদালতে আপিল করতে পারবেন। জেলা জজ কর্তৃক আপিলের আদেশের বিরুদ্ধে ওই আদেশের ৯০ দিনের মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে পুনঃপরীক্ষা করা যাবে, এবং এই বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।
নতুন মুতাওয়াল্লির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর: কোনো মুতাওয়াল্লিকে অপসারণ করা হলে অথবা মুতাওয়াল্লি পদত্যাগ করলে এবং তার পদত্যাগ গৃহীত হলে, ডেপুটি কমিশনার বিদায়ী মুতাওয়াল্লিকে উচ্ছেদ করে ওয়াকফ সম্পত্তি এবং এর দলিল উত্তরবর্তী মুতাওয়াল্লিকে কিংবা প্রশাসককে হস্তান্তর করবেন। মুতাওয়াল্লি যদি বিশ্বাস ভঙ্গ করেন, অথবা ওয়াকফ সম্পত্তির ক্ষতি সাধনমূলক কোনো কাজ করেন, তবে তাকে ওয়াকফ সম্পত্তির অথবা তার স্বত্বভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ৬৩ ধারা অনুসারে, যদি কোনো বিদায়ী মুতাওয়াল্লি ওয়াকফ সম্পর্কীয় ব্যবস্থাপনার হিসাবাদি, দলিলাদি, নথিপত্র ও ওয়াকফের নগদ অর্থবিষয়ক কাগজপত্র তার উত্তরবর্তী মুতাওয়াল্লীকে হস্তান্তর করতে অপারগ হন, অথবা অস্বীকার করেন এবং ওয়াকফ-জমিতে উৎপন্ন ফসলাদি এবং ওই সম্পত্তির দখল সমর্পণ না করেন, তবে ৬১ ধারা মোতাবেক তাকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানায় এবং অনাদায়ে ছয় মাস পর্যন্ত কারাদন্ডিত করা যেতে পারে
সরকার থেকে মুতাওয়াল্লি নিয়োগ: অনেক সময় দেখা যায় মসজিদ কমিটি বা মোতাওয়াল্লীকে নিয়ে মুসল্লীদের মধ্যে বিরুধ সৃষ্টি হয়। সেক্ষেত্রে ওয়াকফ অধ্যাদেশ এর ৪৪ ধারা অনুসারে, এই অধ্যাদেশ বা অন্য কোনো আইনে অথবা কোনো দলিল-দস্তাবেজে যে কোনো বিধান থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজন বিশেষে প্রশাসক ওয়াকফ সম্পত্তি এবং সংলগ্ন সম্পত্তির সুষ্ঠু পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য নির্ধারিত শর্তে ও বেতনে একজন সরকারি মুতাওয়াল্লি নিয়োগ করতে পারবেন।
মসজিদে রিসিভার নিয়োগ: ফৌজদারী কাযবিধির ১৪৬ ধারা মোতাবেক জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট যখন পুলিশ রিপোট বা অন্য কোনভাবে যথাযথ মনে করবেন যে কোন ওয়াকফ সম্পত্তিতে বিরুধের কারনে কোন পক্ষ দখলে নেই তখন উক্ত মসজিদে বা ওয়াকফ সম্পত্তিতে রিসিভার নিয়োগ দিতে পারেন।
মসজিদ কমিটি গঠন পদ্ধতি ও মেয়াদকাল: প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতিতে ক্ষেত্রবিশেষ অর্থের অপচয় হয়, দলাদলির সৃষ্টি হয়, কোন্দল বৃদ্ধি পায়, পরষ্পর শত্রুতার স্থায়ী বীজ বপন হয় ও মহল্লাবাসী বিভক্ত হয়ে যায়। তাই পরামর্শের ভিত্তিতে কমিটি গঠন যুক্তিযুক্ত। এক্ষেত্রে মহল্লার মুরুব্বি, নামাজি, পরহেজগার ও জ্ঞানীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন। কমিটির মেয়াদ নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে আলেমদের অভিমত হলো, কাউকে কোনো দায়িত্ব দেয়ার পর তিনি যতদিন পর্যন্ত সুস্থতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, দুর্নীতি ও চরিত্রহীনতার শিকার না হোন এবং স্বেচ্ছায় অব্যাহতি না নেন- ততদিন পর্যন্ত তাকে দায়িত্ব থেকে না সরানো ভালো। এতে করে কাজের ধারাবাহিকতা ঠিক থাকে।
কমিটির যোগ্যতা ও গুণাবলী: মসজিদ কমিটি অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ধর্মীয় দায়িত্ব। যে কারও হাতে এ দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া ঠিক না। তাই কাউকে মসজিদ কমিটির জন্য বাছাই করার আগে অবশ্যই নিশ্চিত হওয়া দরকার- মসজিদ কমিটির দায়িত্ব নেয়ার মতো যোগ্যতা তার আছে কি-না। আল্লাহর রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন আমানত নষ্ট করা হবে তখন থেকে কিয়ামতের অপেক্ষা করতে থাকবে। জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) কীভাবে আমানত নষ্ট করা হবে? তিনি বললেন, যখন অযোগ্যকে দায়িত্ব দেয়া হবে তখন থেকে কিয়ামতের অপেক্ষা করতে থাক। -সহিহ বোখারি: ৬৪৯৬ । তিনি (সা.) আরও ইরশাদ করেছেন, তুমি পদপ্রার্থী হবে না। যদি প্রার্থী হয়ে পদ পাও তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তা তোমার ওপর নিক্ষেপ করা হবে। আর যদি প্রার্থী না হয়ে পদ পাও তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে দায়িত্ব পালনে তোমাকে সাহায্য করা হবে। -সহিহ বোখারি: ৭১৪৭। নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, অতি শীঘ্রই তোমরা পদের প্রতি লোভী হবে। কিয়ামতের দিন তা লজ্জার কারণ হবে। -সহিহ বোখারি: ৭১৪৮।
পরিশেষে, বলতে চাই আমাদের সমাজে মসজিদের আধিপত্যকে কেন্দ্র করে নানাবিধ বিরুধ সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনেক যায়গায় মোতাওয়াল্লী তাহার প্রভাব কাঠাতে চায় বা দাতা হিসাবে মসজিদে কতৃত্ব দেখাতে চান। যাহা কিনা সম্পূর্ণ গোনাহের কাজ। আল্লাহর ঘরে মসজিদের যায়গা দান করার পর সেটা আর দাবী করার কোন সুযোগ নেই। সেহেতু দানশীলরা দান করে সেই দানকে কেন্দ্র করে কতৃত্ব দেখানোর প্রচেষ্টা না করাই আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তিত্ব। সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের প্রতি আহ্ববান থাকবে আল্লাহর ঘর শান্তিপূর্ণ ভাবে পরিচালিত হবার লক্ষ্য সকলের সহযোগীতা একান্তকাম্য। তবে মসজিদের সম্পত্তি কোন তত্ত্বাবদায়ক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তির দ্বারা অপব্যবহার বা অন্যায়ভাবে কতৃত্ব যাহিল করতে চাহিলে সকলের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা অপরিহার্য।
লেখক: নিয়ামুল হক(এডভোকেট), জজ কোট, মৌলভীবাজার।০১৭১৭-৪৯০৮৮০।