কল্পনার জগৎ-
মন যখন লুম্বিনিতে
-শামীমা রিতু
ছবিটা দেখার পর থেকেই মনে অনুভূত হলো যেনো ও নয়, আমিই ঘুরে বেড়াচ্ছি। অবশ্য ও শুধু ঘুরে বেড়ানোর জন্য সেখানে যায়নি; গিয়েছে নরেক ফেলো হয়ে কমিউনিটি রেডিও’র কাজে। আমি জানিনা মানুষের মনের এমন অবস্থার কোন নাম ‘মনোবিজ্ঞান’ এ আছে কি না। নেপাল নামটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় খুঁটি হিমালয় পর্বতমালার শুভ্র বরফ আর কানে ভাসে সেই শান্তির বাণী ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক’।
ভৌগোলিক কারণেই ভূমিকম্পপ্রবণ, পাহাড়-পর্বতে খাদের কিনারায় ভয়ংকর সড়ক পথ, পৃথিবীর সবচেয়ে বিপদজনক বিমানবন্দর এরপরেও নেপালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমেহিত হন না এমন মানুষ পৃথিবীতে বিরল। সত্যজিৎ রায় ফেলুদাকে গল্পের প্রয়োজনে অনেকবার পাঠিয়েছেন এই নেপালে। কী দারুন রোমাঞ্চকর সে সব বিবরণ।
বাংলা সাহিত্যের বড় একটা অংশ জুড়েই আছে নেপাল।আর হবেই না কেন? দক্ষিণ এশিয়ার এই পর্যটন প্রধান অলৌকিক সৌন্দর্যের স্থানটি যে ভারতীয় উপমহাদেশেরই অংশ। হিমালয়ের একক প্রভাবে প্রভাবিত তার আবহাওয়া আর জলবায়ু। বিশাল বিশাল সব পাহাড়ের মাধুর্যতায় বিলীন হয়ে যায় জীবনের দুঃখ। তীব্র শীত আর হিমালয়ের বরফে জীবনের দুঃখকেও যেন জমিয়ে দেয়।
লুম্বিনি নেপালের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে প্রধান এবং বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের প্রধান তীর্থস্থান। কারণ এখানেই রাণী মায়াদেবী (হিন্দু পুরাণে যাকে বলা হয়েছে রূপাদেবী) পুত্র সিদ্ধার্থের জন্ম দেন। যিনি পরে গৌতম বৌদ্ধ নামে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তন করে জগদ্বিখ্যাত হন। এটি নেপালের দক্ষিণ-পশিমাঞ্চলের একটি ছোট্ট শহর।
প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবে এটি ৫৫০ খ্রিষ্টপূর্বের নিদর্শন বহন করছে। এখানে জাপানি স্থাপত্যবিদ কেঞ্জু টাংজির করা ডিজাইনে একটি মন্দির নির্মাণ করা হয়। যা একটি ছোট পার্কের মাঝখানে স্থাপিত। এছাড়া আছে পবিত্র পুকুর বলে খ্যাম একটি প্রাচীন পুকুর, অশোক স্তম্ভ, মায়াদেবীর প্রাচীন মূর্তি আর থাই মনেস্ট্রি। আকর্ষণীয় সবুজ ঘাষ বিছানো প্রান্তর পলকেই পথের সব ক্লান্তি দূর করে দেয় যে কারো। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো লুম্বিনিকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসাবে ঘোষণা করে।
নেপালে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থাপনা হলো এই মন্দিরগুলো। প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে এগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম।নিঁখুত কারুকাজ, রং, ডিজাইন দেখে অবাক হতে হয়। কী শৈল্পিকভাবে এগুলোকে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে যেনো জীবন্ত। মন্দিরের ভেতরে-বাইরে বিভিন্ন ধরনের মূর্তি সেগুলোর গুরুত্বকে যেন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন মনোরম এসব মন্দিরের কারুকার্যে ভারতীয় স্থাপত্য রীতি যেমন দেখা যায়; তেমনি দেখা যায় থাই-বার্মিজ এবং কম্বোডিয়ান রীতিও।
ও হ্যা, যে ছবিটি দেখে এতক্ষণ কল্পনায় লুম্বিনিতে হাঁরিয়েছিলাম এটি সেই ছবি। কম্বোডিয়ান মন্দিরের সামনে দাঁড়ানো রুমানা। ওর চোখেই লুম্বিনি দেখে এলাম।
১৫ জানুয়ারি ২০২৪ইং, রেডিও পল্লীকন্ঠ এফএম ৯৯.২
শামীমা রিতুঃ কবি, সহ-সভাপতি বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাব মৌলভীবাজার জেলা শাখা।
অনুলিখনঃ স’লিপক।