আজ-  ,


সময় শিরোনাম:
«» ঢাকায় বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাব ১৬তম জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন উদযাপন কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত «» কমলগঞ্জ নৃত্যাচার্য নীলেশ্বর মুখার্জী’র ১৩৬তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন «» কমলগঞ্জে মণিপুরি বর্ণমালায় পরীক্ষা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা «» কমলগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃত্যু «» শমশেরনগর হাসপাতাল পরিবারে যুক্ত হলেন বৃটেন প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোফাসসিল আলম সোহেল «» বগুড়ায় ফেন্সিডিলসহ ২ জন গ্রেফতার «» মৌলভীবাজারে বিএনপি নেতা ভিপি মিজানুর রহমানসহ ১৪ নেতাকর্মী কারাগারে «» ন্যায্য মূল্যে পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চতকরণে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে «» মৌলভীবাজারে বিএনপি নেতা ভিপি মিজানুর রহমানসহ ১৪ নেতাকর্মী কারাগারে «» মৌলভীবাজারে ক্যাব-এর মানববন্ধন ও স্বারকলিপি প্রদান

ভাদ্রের অমাবস্যাকে “কচু দিবস” ঘোষণা করা হোক -উত্তম দেবনাথ

বহুকাল ধরে কৃষিপ্রধান ভারতীয় উপমহাদেশে ভাদ্র মাসের অমাবস্যায় কচুরঝোল খাওয়া হয়। ঘড়ির কাঁটার বিশেষ অবস্থানের কারণে যেভাবে আমরা সময় বুঝতে পারি। সৌরজগতের পৃথিবীও অনেকটা ঘড়ির কাঁটার মতো উপবৃত্তাকার পথে সূর্যের চারিদিকে বছরে একবার করে পরিভ্রমণ করে চলছে। সুনির্দিষ্ট স্থান অতিক্রম করার পর যেমন এক এক ঘন্টা সময় বুঝতে পারি; ঠিক তেমনই ৩৬৫ দিনের সৌরবর্ষের ১২টি মাস, ৬টি ঋতু আমরা পেয়ে থাকি। উপবৃত্তাকার পথে সূর্যের চারিদিকে ঘুরতে গিয়ে বিশেষ বিশেষ স্থানে অবস্থানের মাধ্যমে মাস ও ঋতু বদল এবং ঋতু বদলের কারণে মাস ও ঋতু ভিত্তিক আবহাওয়ারও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে।

এমন করেই কৃষিপ্রধান এই অঞ্চলের মানুষ, বিশেষ মাস বা ঋতুতে বিশেষ বিশেষ ফসল উৎপাদন করে থাকে। কৃষিপ্রধান হওয়ার সুবাদে, এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠী কৃষিকাজে সদা নিয়োজিত থাকেন। ভাদ্রমাস জুঁড়ে চলতে থাকে আমন চাষের জমির প্রস্তুতি। আমন ধানের চারা রোপণ, ভাদ্রের জলভরা জমিতে চাষকার্য করতে হয়। দিনের বেশিরভাগ সময় জলে থাকার কারণে হাত-পায়ের চামড়া নরম থাকে। এই সময়ে গরমও পড়ে প্রচন্ড; প্রচুর ঘর্ম নির্গমন এবং জলে ভেজা ও হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায়, তাতে ভেজা; এমন নানাবিধ কারণে জ্বর, কাশি, গায়ের ব্যাথা বেদনা, নানাবিধ শারীরিক অসুস্থতায় ভুগতে হয়।

একটা সময়ে আমাদের এতদাঞ্চলে ভেষজ চিকিৎসার ব্যাপক প্রচলন ছিলো। ভেষজবিদ্যা মতে, বিশেষ বিশেষ সময়ে, বিশেষ বিশেষ ভেষজ উদ্ভিদ, বিশেষ বিশেষ গুণ লাভ করে। রোদ-বৃষ্টির দাপটে এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে শ্রান্ত শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভাদ্র মাসের অমাবস্যায় কচুর ঝোল খাওয়া হয়।

কচুর ঝোল খাওয়া জনপ্রিয় করা এবং গুরুত্বের সাথে নেয়ার জন্য এর সাথে ধর্মীয় অনুভূতির সংযোগ সাধন করা হয়। যেমন শ্রীকৃষ্ণের জন্ম তিথি জন্মাষ্টমীর ৮দিন পর ভাদ্রের অমাবস্যা। সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ সাধারণত শিশুর জন্মের অষ্টম দিবসে নবজাতকের নামকরণ অনুষ্ঠান করে থাকেন। এইদিন আনন্দ নাড়ু,আটকড়াইয়া (চাল, বেশ কয়েকপদের ডাল, তিল, তিসি, বাদাম, ছোলা, মিঠাজিরা, আলাদা আলাদা করে খোলায় ভেজে একত্রে মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয় আটকড়াইয়া)।

আডোরা (কলা বা আঢ্যকলা গাছের গোড়া পরিষ্কার করে নিয়ে মাদার গাছের চৌকা কাঁটাযুক্ত ডালে ঘষে ঘষে নারকেল কোরার মতো করে নিয়ে লবণ মরিচ গুঁড়ো হলুদ গুড়ো মসলা সহযোগে রন্ধন করা তরকারি যা, লোহাসমৃদ্ধ। প্রসবকালীন মায়ের রক্ত-রস ক্ষরণজনিত দৌর্বল্য ও রক্তশূন্যতা পুরণের জন্য একান্ত কার্যকর এই বিশেষ তরকারি। আডোরা অঞ্চল ভেদে কচুর ঝোলও পাক করা হয়। তৈলের পিঠা বা তালের বড়া সহ অন্যান্য তরকারি রন্ধন করা হয়। ভাদ্রের অমাবস্যাতেও এইগুলোই করা হয়।

বাংলা ভাষায় “কচু দেওয়া” বলতে ঠাট্টার সম্পর্কের সম্পর্কিতদের পরষ্পরের মধ্যে খুনসুটি বুঝায়। ভাদ্র মাসের অমাবস্যায় যেহেতু কচুর ঝোল খাওয়া হয়, তাই এই ভাদ্রের অমাবস্যা উপলক্ষে বেহাই বেহাইনকে কচু দেয় অর্থাৎ এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে কচু পাঠানো হয়। এনিয়ে আবার ঠাট্টা তামাশাও করা হয়। শরীরের ইমিউনিটি তথা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সবাই কচু তরকারি, কচুর ঝোল খান।

আজ ভাদ্রের অমাবস্যা। এইদিনে প্রায় সবার কচুর ঝোল খাওয়া হয়। ভেষজ গুণ সম্পন্ন কচুর ঝোল খাওয়ার জনপ্রিয় এইদিন তথা ভাদ্র মাসের অমাবস্যাকে “কচু দিবস” ঘোষণা করলে কেমন হয়?
১৪/০৯/২০২৩খ্রি, ফেনী।

উত্তম দেবনাথঃ কবি, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, গবেষক, শব্দ বিশ্লেষক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক- বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাব।
(অনুলিখনঃ স’লিপক)