আজ-  ,


সময় শিরোনাম:
«» ঢাকায় বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাব ১৬তম জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন উদযাপন কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত «» কমলগঞ্জ নৃত্যাচার্য নীলেশ্বর মুখার্জী’র ১৩৬তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন «» কমলগঞ্জে মণিপুরি বর্ণমালায় পরীক্ষা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা «» কমলগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃত্যু «» শমশেরনগর হাসপাতাল পরিবারে যুক্ত হলেন বৃটেন প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোফাসসিল আলম সোহেল «» বগুড়ায় ফেন্সিডিলসহ ২ জন গ্রেফতার «» মৌলভীবাজারে বিএনপি নেতা ভিপি মিজানুর রহমানসহ ১৪ নেতাকর্মী কারাগারে «» ন্যায্য মূল্যে পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চতকরণে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে «» মৌলভীবাজারে বিএনপি নেতা ভিপি মিজানুর রহমানসহ ১৪ নেতাকর্মী কারাগারে «» মৌলভীবাজারে ক্যাব-এর মানববন্ধন ও স্বারকলিপি প্রদান

আমাদের দায়িত্ববোধ ও ইমামের মর্যাদা এবং মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা

কে এস এম আরিফুল ইসলাম::মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে কয়েক লাখ ইমামের অর্থনৈতিক দুরবস্থা চরমে। সময়ের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন পেশার মানুষের জীবন যাত্রার মান বাড়লেও ইমামদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র ফুটে উঠে। মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হচ্ছে মসজিদ , আর মসজিদের ইমাম হলেন আমাদের মুসলিম সামাজের একজন র্ধমীয় নেতা স্বরুপ,পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ানো থেকে শুরু করে একটি সমাজে যখন একজন মুসলমন মারা যান তার জানাজা, ফাতেহা,দাফন , কবর জেয়ারত ইত্যাদি ইমামের সহায়তায় সম্মন্ন হয়, ঈদ, কোরবান, রমজানে ইত্যাদি বড় র্ধমীয় অনুষ্ঠান পরিচালনায় ইমামের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের মুসলিম সামাজে মসজিদের ইমামের এত গুরুত্ব থাকার পরও ,ইমামরা অবেহেলিত এবং ফকিরের মতো জীবনযাপন করছেন।

সমাজের অনুকূল এবং প্রতিকুল মানুষের সাথে মানিয়ে নেওয়া এটাই যেন জীবনে বড় সংগ্রাম।মসজিদ কমিটিতে বেজাল লেগে কখন চাকুরী চলে যায় সেই ভয়েও থাকতে হয় সবার মন যুগিয়ে।

শুক্রবার,ঈদে,পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিরামহীন কর্তব্যগুলো পালন করে ছুটির গন্ধ খুব কমই মিলে।তারপরও চালিয়ে যাচ্ছেন জীবন। মুসলিম সমাজের এই গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বেতন ২০০০ থেকে শুরু করে ভালো মসজিদের ইমামের বেতন ১০০০০,যেটা দায়িত্বের তুলনায় সাগরে বিন্দু কনা।

শাব্দিকঅর্থে ইমাম::

আরবী ‘ইমাম’ শব্দের অর্থ নেতা। আর এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Leader. ইংরেজি একটি প্রবাদ বাক্যে Leader. বা নেতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, He is the Leader, Who knows the way, who go’s the way and who show’s the way. অর্থাৎ ‘যিনি সঠিক পথ সম্পর্কে জানেন, সেই পথে চলেন এবং মানুষকে পথ দেখান তিনিই নেতা।’ অর্থাৎ নেতাকে জানতে হবে জীবন চলার সঠিক পথ সম্পর্কে; শুধু জানলেই হবে না বরং তাঁকে অনুসরণ করতে হবে সেই পথ এবং একইসাথে তিনি অনুসারীদেরকে সেই সঠিক পথে পরিচালিত করবেন।

যে কাউকে ইমাম হিসেবে পরিগণিত করার কোন সুযোগ ইসলামে নেই। দ্বীনী বা ধর্মীয় কাজে ইমামতির জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও গুণাবলী অর্জিত না হলে তাকে ইমাম হিসেবে ইসলাম স্বীকৃতি দেয় না। কেননা, সমাজে ও মসজিদে ইমামতির জন্য তার কিছু মৌলিক যোগ্যতা থাকা চাই। একজন ইমামের যে সকল গুণাবলী বা যোগ্যতা থাকা আবশ্যক সে সম্পর্কে ইসলামে পরিস্কার দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

হযরত ইবরাহীম (আ.)-কে মুসলিম মিল্লাতের নেতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ইমামতির আসনের জন্য যোগ্য হিসেবে মহান আল্লাহ্র কাছে প্রমাণিত হওয়ার জন্য তাঁকে অগ্নীতে নিক্ষেপ , সন্তানকে কুরবানী  এবং দেশ থেকে হিজরতের মতো বড় বড় কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে।  সে-সব পরীক্ষায় হযরত ইব্রাহীম (আ.) সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সুতরাং তাকওয়া, খোদাভীতি এবং মহান রাব্বুল আ’লামীনের প্রতি পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পনই ইমামের প্রথম যোগ্যতা হওয়া আবশ্যক।

ইমামের ফজিলত::

মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন সূরা ফুরকানে মুমিন এর ১৩টি গুণের বর্ণনা দিয়েছেন। তার মাঝে একটি গুণ হলো- মুমিনরা আল্লাহ্র দরবারে এই বলে প্রার্থনা করবে যে, “হে প্রভু আমাদের মুত্তাকীনদের ইমাম বানিয়ে দিন। সুতরাং একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্যই হলো ইমামতের আকাক্সক্ষা পোষণ করা।

ইমামত হচ্ছে আল্লাহর দেয়া এক বিশেষ পুরস্কার বা নেয়ামত। যেমন আল্লাহ তা’য়ালা সূরা সিজদার ২৪ নং আয়াতে ইরশাদ করেন, “আমি তাদেরকেই ইমামত দান করেছি যারা আমার আদেশের উপর অটল-অবিচল থাকে এবং আমার নিদর্শনাবলীর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।” নবী করীম (সাঃ) স্বয়ং ইমাম ও মুয়াজ্জিনের জন্য আল্লাহ্র দরবারে দু’আ করেছেন।

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ইমাম হলেন জিম্মাদার আর মুয়াজ্জিন হলেন আমানতদার। “হে আল্লাহ আপনি ইমামদের সুপথে পরিচালিত করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দিন”। (আবু দাউদ-৫১৭, তিরমিযি- ২০৭) ইমামত অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব। যা পালন করেছেন হযরত মুহম্মদ (সাঃ) স্বয়ং নিজেই। তাঁর পরবর্তী খোলাফায়ে রাশেদীনগণ। তাদের পরবর্তী মুসলমানদের সর্বোত্তম পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ সমাজের ইমামতি করেছেন।

শরীআতে ইমামের যোগ্যতা::

ইসলামী শরীআতে ইমামের সর্বপ্রথম যোগ্যতা হচ্ছে তাকওয়া, তবে শুধু তাকওয়া থাকলেই হবে না, ইমামতির জন্য আরো কিছু যোগ্যতা ও গুণাবলী থাকা আবশ্যক।

পবিত্র কালামে পাকের সূরা বাকারা-এর আয়াত-১১২, সূরা মুমিনিন-এর আয়াত-০১, সূরা আহযাব-এর আয়াত-২২ তে একজন ইমামের যোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে।

সুতরাং সে অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে একজন ইমামের যে সকল যোগ্যতা থাকা আবশ্যক তা হলোঃ
১.    মুসলমান হওয়া;
২.    আলেম হওয়া; অর্থাৎ দ্বীনী ইল্ম বা শরিয়াতের পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে;
৩.    বালিগ হওয়া;
৪.    সুস্থ্য ও স্বাভাবিক হওয়া:
৫.    পুরুষ হওয়া;
৬.    স্বাধীন হওয়া;
৭.    বিভিন্ন প্রকার ওযর ও অসুবিধামুক্ত হওয়া।

এসব যোগ্যতা থাকলে একজন ব্যক্তি ইমামতি করতে পারবেন। কিন্তু কোন একটি মসজিদে এধরনের যোগ্যতা সম্পন্ন একাধিক ব্যক্তি থাকলে সে-ক্ষেত্রে কে ইমামতি করবেন বা কে ইমামতির যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন সে ব্যাপারেও শরিয়াতে স্পষ্ট ধারণা দেয়া হয়েছে। আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে অবশ্য নির্ধারিত ইমাম দায়িত্ব পালন করে থাকেন; প্রত্যেক ওয়াক্তে পৃথক পৃথক ইমাম নির্বাচনের কোন প্রয়োজন হয় না এবং মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব পালনকারী কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে ইমাম নিয়োগ দিয়ে থাকেন। তবে অনেক ক্ষেত্রে এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালিত হয় না। ফলে ইমামতির দায়িত্বটি অনেকটা কমিটির কর্তা ব্যক্তিদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিচালিত হয়।

তবে ২০০৬ সালের মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালায় সদাশয় সরকার মসজিদের সকল পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু বিধিমালা প্রন্তাব করা হয়েছে। এর তফশিল অংশে মসজিদের খতীব, পেশ ইমাম, ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেম প্রভৃতি পদে নিয়োগের জন্য পৃথক পৃথক যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা হয়েছে। মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করা সম্ভব হলে মসজিদে যোগ্য ইমাম নিয়োগ ও তাঁদের দায়িত্ব কর্তব্য ও অধিকার বান্তবায়ন সহজ হবে। কিন্তু বান্তবতা হলো ওই নীতিমালাটি এখনো কেমনভাবে কার্যকর করাতো দূরে কথা মসজিদ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছানোই হয়নি। ফলে ইমামদের অবস্থার কোন পরিবর্তন এর দ্বারা সাধিত হয়নি।

একজন ইমামের দায়িত্ব ও কর্তব্য ::

ইমাম প্রধানতঃ আলেম বা দ্বীনী জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিগণই হয়ে থাকেন। সে হিসেবে তাঁরা ‘ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া’ অর্থাৎ নবী-রসূলগণের ওয়ারিশ।  নবী-রসূলগণ কোন বৈষয়িক সম্পত্তি রেখে যাননি। তাঁরা রেখে গেছেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও তার আলোকে পরিচালিতব্য মিশন। পৃথিবীতে আর কখনও নবী-রসূল (আ.)-এর আগমন ঘটবে না। কেননা, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-ই সর্বশেষ রসূল। আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) যে মিশন নিয়ে দুনিয়ায় এসেছেন সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেন-
হে নবী! আমিতো তোমাকে পাঠাইয়াছি সাক্ষীরূপে ও সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। আল্লাহর

অনুমতিক্রমে তাঁহার দিকে আহবানকারীরূপে এবং উজ্জল প্রদীপরূপে।
মহানবী (স.) নিষ্ঠার সাথেই আল্লাহ প্রদত্ত ওই দায়িত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রতিপালন করেছেন। কিন্তু তিনিও ছিলেন একজন মানুষ। সুতরাং এ নশ্বর পৃথিবী থেকে তাঁকে বিদায় নিতে হবে এটাই স্বাভাবিক। তাঁর তীরোভাবের পর ইসলামের এই কার্যক্রম কীভাবে সম্পন্ন করা যাবে সে সম্পর্কে তিনি পরিকল্পনা পেশ করেছেন। বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণে এ প্রসঙ্গে তিনি পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেন যে, তিনি আল্লাহর কুরআন ও তাঁর হাদীস রেখে যাচ্ছেন, যা পরবর্তীতে মানুষকে সঠিক পথে পরিচালনা করবে। সুতরাং যারা এ দুটো জিনিসকে আঁকড়ে ধরবে তারাই সফল হবে। এর ব্যতিক্রম হলে মানুষের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্য লাভ করা সম্ভব হবে না। ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া হিসেবে মহানবী (স.) প্রদত্ত সেই দায়িত্ব আঞ্জাম দিবেন বর্তমান আলেম সমাজ; বিশেষ করে দেশের মসজিদে নিয়োজিত সম্মানিত ইমামগণ এটাই ইসলামের দাবি। যুগ যুগ ধরে দেশের আলেম সমাজের ওপর অর্পিত রয়েছে এই দ্বীনী দায়িত্ব।

ইমাম সমাজ সে দায়িত্ব পালন করছেন না তা নয়। কিন্তু সু-সমন্বিতভাবে ও সঠিক উপায়ে ইমামতির দায়িত্ব পালনে তাঁরা সক্ষম হলে এ সমাজ তথা দেশের চিত্র পাল্টে যেতে বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। আর একারণেই দেশের উন্নয়নে তাঁদেরকে সম্পৃক্ত করার প্রশ্নটি বিভিন্ন মহল থেকে বেশ গুরুত্বের সাথে উচ্চারিত হচ্ছে। ইমামগণ কি আসলের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কোন অবদান রাখছেন? বা তাঁরা কি তা রাখতে সক্ষম এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গভীর গবেষণার প্রয়োজন। তেমন কোন গভীর গবেষণার অভাবে ইমামদের কর্মকা- সমাজ তথা জাতির সামনে অনেকটা অলক্ষেই রয়ে গেছে। দেশের ইমাম সমাজের কর্মকা- ও তাঁদের সমস্যা ও সমাধানের উপায় সম্পর্কে আলোকপাত করলে প্রকৃত চিত্র সামনে চলে আসবে।

মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা::

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর ‘মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’ নামে একটি প্রজ্ঞাপন জারী করে। ওই প্রজ্ঞাপনে একজন ইমামের দায়িত্ব-কর্তব্য কি হবে সে সম্পর্কে এর ২৪(৩)(ক) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- ইমাম-

(অ) মসজিদের আমানতদার হিসেবে কাজ করিবেন;

(আ) মসজিদের সাধারণ মুসুল্লী ও এলাকাবাসীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্বভাব, চরিত্র, আমল আখলাক উন্নয়নে সাধ্যানুযায়ী অবদান রাখিবেন;

এখানে উপ-অনুচ্ছেদ (অ)-তে ‘মসজিদের আমানতদার হিসেবে কাজ করবেন’ বলতে ধর্মীয় দৃষ্টিতে একজন ইমামের যে দায়িত্ব রয়েছে তা নিষ্ঠার সাথে পালনের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে,    আর উপ-অনুচ্ছেদ (অ)-তে তাঁর সামাজিক দায়-দায়িত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ধর্মীয় ও রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত এসকল দায়িত্বের দিকে দৃষ্টিপাত করলে বোঝা যায় ইমাম শুধুমাত্র নামায পড়ানোর মধ্যেই তার দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রাখবেন না; বরং তাকে সামাজিক নেতৃত্বের আসলে আসীন হয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

আজকের সমাজে নানা ধরনের অনাচার, অবিচার, জুলুম, নির্যাতন চলছে। জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক উষ্কানীমূূলক কর্মকা-, বাল্যবিয়ে, যৌতুকসহ সব ধরনের অনাচার থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। চারিদিকে যখন এসব অনাচার চলছে, তখন ইমামগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না। বিশেষ করে ইসলামে নিষিদ্ধ জঙ্গিবাদ আর সাম্প্রদায়িক উষ্কানীমূলক কর্মকা- থেকে জাতিকে রক্ষা করে শান্তি প্রতিষ্ঠা এমূহুর্তে সবচেয়ে বড় কাজ। সুতরাং ইমামগণ মসজিদে খুৎবার পাশাপাশি সকল প্রকার আলোচনা ও মাহফিলে এসব বিষয় সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন এবং জাতিকে সচেতন করে তোলার মাধ্যমে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নিবেন বলে জাতি প্রত্যাশা করে।

আমাদের দায়িত্ববোধ::

মুসলিম সমাজের এই গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বেতন ২০০০ থেকে শুরু করে ভালো মসজিদের ইমামের বেতন ১০০০০,যেটা দায়িত্বের তুলনায় সাগরে বিন্দু কনা।

তারপরও আল্লাহ পাক চালিয়ে নিচ্ছেন সম্মানিত এই ব্যক্তিদের।চুরি করতে হচ্ছে না,ঘুষ খেতে হচ্ছে না,অন্যকে ঠকানোর চিন্তা নেই,অন্যের জায়গা দখলেরও চিন্তা নেই।জিনিষ পত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, সাধারণ মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে, একজন ইমামের তেমনি হিমশিম খেতে হয় সংসার চালাতে গিয়ে ।

আবার অনেক মসজিদ আছে যেখানে ঠিক সময় মত ইমাম সাহেবদের বেতন দেওয়া হয়না, এমনিতে বেতন কম আবার ঠিক সময় মত বেতন না দেওয়ার কারণে ইমাম সাহেবদের সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় । ঠিকমত সংসার চালাতে পারেননা টাকার জন্য, তারপর সন্তানদের লেখা পড়া, রোগ হলে চিকিৎসার খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয় ।

অনেক মসজিদ কমিটি আছেন যারা চিন্তা করেন মসজিদে টাইলস লাগাবেন, এসি লাগাবেন, কিন্তু চিন্তা করেননা ইমাম সাহেবদের বেতনের কথা, মসজিদের সৌন্দর্য বর্ধনের  বিরোধী আমরা নই, কিন্তু এসবের পাশাপাশি ইমামদের বেতনের দিকে দৃষ্ঠি দিতে হবে কারণ ইমাম সাহেবরাও মানুষ উনাদেরও পরিবার আছে ।
এমন ইমাম সাহেব আছেন যাদের আর্থিক অবস্থা খারাপের জন্য বছরের পর কয়েকটা পোশাক পড়ে কাঠিয়ে দিতে দেখা যায়, এখন চিন্তা করার সময় এসেছে ইমামদের নিয়ে উনাদের বেতন নিয়ে ।

পরিশেষে বলতে চাই ইমাম এবং পরিবারের দিকে সমাজের বিত্তবান এবং সরকারের দৃষ্টি দেওয়া উচিৎ

লেখক::

কে এস এম আরিফুল ইসলাম
কলামিস্ট ও সিনিয়র সহকারী শিক্ষক
দারুল আজহার ইনস্টিটিউট
শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার