আজ-  ,


সময় শিরোনাম:
«» ঢাকায় বাংলাদেশ পোয়েটস ক্লাব ১৬তম জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন উদযাপন কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত «» কমলগঞ্জ নৃত্যাচার্য নীলেশ্বর মুখার্জী’র ১৩৬তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন «» কমলগঞ্জে মণিপুরি বর্ণমালায় পরীক্ষা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা «» কমলগঞ্জে ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির মৃত্যু «» শমশেরনগর হাসপাতাল পরিবারে যুক্ত হলেন বৃটেন প্রবাসী ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোফাসসিল আলম সোহেল «» বগুড়ায় ফেন্সিডিলসহ ২ জন গ্রেফতার «» মৌলভীবাজারে বিএনপি নেতা ভিপি মিজানুর রহমানসহ ১৪ নেতাকর্মী কারাগারে «» ন্যায্য মূল্যে পণ্য প্রাপ্তি নিশ্চতকরণে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে «» মৌলভীবাজারে বিএনপি নেতা ভিপি মিজানুর রহমানসহ ১৪ নেতাকর্মী কারাগারে «» মৌলভীবাজারে ক্যাব-এর মানববন্ধন ও স্বারকলিপি প্রদান

ন্যায্য মজুরী কাঠামো ঘোষণাসহ চা শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও জীবনমান উন্নয়নে আট দফা সুপারিশ টিআইবি’র

ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮: সরকার, বাগান কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিকদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে একটি যৌক্তিক, ন্যায্য এবং অন্যান্য খাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ
মজুরি কাঠামো ঘোষণা করার পাশাপাশি প্রতি দুই বছর পরপর তা হালনাগাদ করার সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। “চা
বাগানের কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের অধিকার: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়” শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আজ টিআইবি’র
ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণসহ শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ, অধিকার ও জীবনমানের উন্নয়নের পাশাপাশি এ খাতে স্বচ্ছতা
ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ৮ দফা সুপারিশ পেশ করে টিআইবি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান,
উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। গবেষণা প্রতিবেদনটি
উপস্থাপন করেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার দিপু রায়। গবেষক দলের অপর দুইজন সদস্য ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো.
গোলাম মোস্তফা এবং ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার রবিউল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। গবেষণার তথ্য সংগ্রহের জন্য দেশের প্রথাগত ৬৪টি বাগান (৪১টি
মূল বাগান ও ২৩টি ফাঁড়ি বাগান) থেকে ১৯১১ জন স্থায়ী শ্রমিকের সরাসরি সাক্ষাতকার গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া মূখ্য তথ্যদাতার সাক্ষাতকার ও দলীয়
আলোচনার মাধ্যমে এই গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
গবেষণাটিতে শ্রম আইনে চা শ্রমিকদের জন্য বৈষম্যমূলক আইন ও বিধিমালা পর্যালোচনা করে তা সংশোধনের সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে। বিশেষ করে শ্রম
আইনে বর্ণিত ছুটি, ভবিষ্য তহবিল, আবাসন, চিকিৎসা, দলীয় বীমা ইত্যাদি সংক্রান্ত বিষয়ে যে বিধিমালা রয়েছে চা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে তা পর্যবেক্ষণ করে
আইনী সীমাবদ্ধতা ও প্রায়োগিক চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি চা শ্রমিকদের জন্য কিছু ইতিবাচক দিকও এই গবেষণার পর্যবেক্ষণে উঠে
এসেছে। সেগুলো হলো, কোনো শ্রমিক অবসরে গেলে কিংবা স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়লে তার পরিবারের একজন অস্থায়ী শ্রমিককে স্থায়ী হিসেবে চাকুরী দেওয়া;
বাগানের হাসপাতাল কিংবা ডিসপেন্সারী থেকে কর্মরত স্থায়ী শ্রমিক ও তাদের পোষ্যদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া; অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকদের সাপ্তাহিক অবসর ভাতা প্রদান;
স্থায়ী শ্রমিকদের মজুরির ৭.৫% হিসেবে ভবিষ্য তহবিল দেওয়া; ২০ দিন অসুস্থতাজনিত ছুটি দেওয়া- যা শ্রম আইনে ১৪ দিন এবং ১৪ দিন উৎসব ছুটি দেওয়া-
যা শ্রম আইনে ১১ দিন; ২ টাকা কেজি দরে রেশন দেওয়া ও একজন স্থায়ী শ্রমিকের জন্য সর্বোচ্চ তিন জনকে পোষ্য হিসেবে রেশন দেওয়াসহ বেশ কিছু বাগানে
১৬ই ডিসেম্বর ও ২৬ শে মার্চ এ খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা ইত্যাদি।
গবেষণায় দেখা যায়, চা বাগানের শ্রমিকদের সর্বশেষ চুক্তিতে দৈনিক মজুরি মাত্র ১০২ টাকা ধরা হয়েছে যা দেশের অন্য খাতের শ্রমিকদের তুলনায় অনেক
কম। আবার ক্যাশ প্লাকিং, নির্ধারিত টার্গেটের অতিরিক্ত পাতা তোলা ও অতিরিক্ত কর্মঘন্টার জন্য শ্রম আইন অনুযায়ী মূল মজুরির দ্বিগুণ মজুরি দেওয়ার নিয়ম
থাকলেও কোনো বাগানেই তা দেওয়া হয় না। অনেক বাগানেই আবার অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ী শ্রমিকদের সমান বেতন দেয়া হয় না। এছাড়া পাতা ওজন করার
সময় অনেক বাগানেই সঠিক পরিমাপ করা হয় না বলে শ্রমিকরা ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত হয়। জরিপ কালীন সময় থেকে পূর্বের এক সপ্তাহের পাতা
উত্তোলনের হিসাব যারা বলতে পেরেছে (৬০.৩৯%) তাদের মধ্যে ৬১.৩% শ্রমিক বিভিন্ন অজুহাতে পাতার ওজন কম দেখানোর কথা বলেন, যার প্রাক্কলিত
আর্থিক মূল্য পাতা উত্তোলনের ভরা মৌসুমে সপ্তাহে ৩১ লক্ষ ২ হাজার ৪৩৫ টাকা (সকল বাগানের মোট ১ লক্ষ ৮৪৩ জন শ্রমিকের হিসেবে)। উৎসব ভাতা
প্রদানের ক্ষেত্রে দেখা যায়, চুক্তি অনুযায়ী কোনো শ্রমিক বিগত বছরে কমপক্ষে ২৫০ দিন কাজ করলেই কেবল ১০০% বোনাস পাবে অন্যথায় কম উপস্থিতির
ক্ষেত্রে বিভিন্ন হারে বোনাস কাটা হয়। এক্ষেত্রে বাবুদের ঠিকমত হাজিরা না তোলা, শ্রমিকদের জন্য কোনো সার্ভিসবুক চালু না থাকা এবং শ্রমিকদের কাজের
দিনের হিসাব ঠিকমতো রাখতে না পারায় বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের অনুপস্থিত দেখিয়ে শ্রমিকদের উৎসব ভাতা কম দেয়।
গবেষণা অনুযায়ী, চা বাগানে চাকুরী স্থায়ীকরণের ক্ষেত্রে শ্রম আইন অনুযায়ী একজন শ্রমিক তিন মাস সন্তোষজনক শিক্ষানবিশ কাল পার করার পরে স্থায়ী
হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কথা থাকলেও ৬৪টি বাগানের কোনোটিতেই তা মানা হচ্ছে না। বিশেষ করে অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ী করলে মজুরিসহ বিভিন্ন সুবিধাদি
দিতে হবে বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বছরের পর বছর তাদের স্থায়ী করা হয় না। শ্রম আইনে শ্রমিকদের স্থায়ী করার সময়ে নিয়োগ পত্র ও আইডি কার্ড দেওয়ার
নিয়ম থাকলেও কোনো বাগানেই তা দেওয়া হয় না; নিয়োগপত্রের বিকল্প হিসেবে সি- ফরম দেওয়ার কথা দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে উল্লেখ থাকলেও ৯২.৯% কে
কোনো নথি সরবরাহ করা হয়নি। এছাড়া চা শ্রমিকদের ছুটি প্রদানের ক্ষেত্রেও সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। অনেক বাগানে অসুস্থতাজনিত ছুটি নিতে গেলে
বাগানের চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত ব্যক্তির কাছ থেকে অসুস্থতাজনিত প্রতিবেদন নিতে হয় বিধায় অনেক সময় অসুস্থ শরীর নিয়ে দায়িত্বরত ব্যক্তির জন্য
চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়ে বসে থাকতে হয়, যা কষ্ট সাধ্য ও অমানবিক। এছাড়া মাতৃত্বকালীন ছুটির ক্ষেত্রেও জরিপ চলাকালীন সময় থেকে গত পাঁচ বছরে ১০.০%
নারী শ্রমিক মাতৃত্বকালীন ছুটি পান নি এবং যারা পেয়েছিলেন তাদের মধ্যে ১০.০% শ্রমিক মাতৃত্বকালীন ছুটির সময়ে মজুরি পান নি। আবার মাতৃত্বকালীন
ছুটিতে যাওয়ার পূর্বের তিন মাসে প্রাপ্ত মজুরির গড় হিসেবে মাতৃত্বকালীন মজুরি পাওয়ার কথা থাকলেও অনেক বাগানেই নূন্যতম হিসাবেই মজুরি দেওয়া হয়।
রেশন প্রদানের ক্ষেত্রেও চা শ্রমিকদের পোষ্যদের রেশন না দেয়া, ওজনে কম দেয়া, পোষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে লিঙ্গভেদে বৈষম্য করাসহ অপর্যাপ্ত রেশন দেয়ার
মত অভিযোগ পাওয়া যায়।
চা শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করে গবেষণায় দেখা যায়, শ্রম বিধিমালায় প্রত্যেক চা বাগানের কাজের জায়গায় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পানি
সরবরাহের সুব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও কোনো বাগানেই স্থায়ী ব্যবস্থা যেমন নলকূপ বা কূয়ার ব্যবস্থা নেই। নেই পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা। শ্রমিকদের
বিশ্রামের জন্য বিশ্রামাগার থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেশিরভাগ বাগানেই বিশ্রামাগার নেই। এছাড়া বাগানে কাজ করার সময় শ্রমিকদের সাপ, জোঁক ও
বিষাক্ত পোকার আক্রমণ ও উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে চা বাগানে ওষুধ বা চুন ছিটানোর জন্য বারবার বলা হলেও বাগান কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেয় না। কীটনাশক
ছিটানোর কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য মাস্ক, গ্লাভস বা জুতা, চশমা, টুপি ইত্যাদি বাগান কর্তৃপক্ষের দেওয়ার নিয়ম থাকলেও
তাদের মধ্যে ৫৭.০% শ্রমিকদের বাগান থেকে কিছুই দেওয়া হয় না বলেও তথ্য পাওয়া যায়।