আজ-  ,


সময় শিরোনাম:
«» সংবাদ বিজ্ঞপ্তিবিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৪জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতের বিকল্প নেইঢাকা, ০২ মে ২০২৪: «» জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরমৌলভীবাজার জেলা কার্যালয় মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয় «» চশমা প্রতীকে লড়বেন গোয়াইনঘাটের ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম আম্বিয়া কয়েছ «» মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহীনা রহমান নির্বাচিত «» জুড়ীতে গাছ থেকে পড়ে কাঠুরিয়ার মৃত্যু «» জুড়ীতে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের সাথে যুব ফোরামের সভা অনুষ্ঠিত «» কুলাউড়ায় হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের «» জুড়ীতে হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রা. কওমী মাদ্রাসা উদ্বোধন «» রাজনগরে কদমহাটা শ্রী শ্রী কালীবাড়ির পুনঃনির্মিত মন্দিরের শুভ উদ্বোধন «» বার্তা সম্পাদক/প্রধান প্রতিবেদক/ব্যুরো প্রধান/নগর সম্পাদক

স্মরণঃ সৈয়দ মহসিন আলীকে যেমন দেখেছি

স্মরণঃ
সৈয়দ মহসিন আলীকে যেমন দেখেছি

-সালেহ আহমদ (স’লিপক)

এক.
আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসিন আলীকে (১২/১২/১৯৪৮ – ১৪/০৯/২০১৫) একজন পরোপকারী জনহিতৈষী হিসেবে চিনি; জানি। তিনি ছিলেন একজন সৎসাহসী, কুশলী এবং সর্বপুরি একজন রসিক মনের মানুষ। শিক্ষা, ক্রীড়া, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে এবং মহান মুক্তিযোদ্ধে তাঁর রয়েছে অসামান্য অবদান। তিনি কথায় নয়; কাজে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর অকালপ্রয়াণ আমাদের জন্য তথা আপমর বাঙ্গালিদের জন্য সত্যিই বেদনাদায়ক। তাঁর জানাজার নামাজে মৌলভীবাজার পৌরসভা কর্তৃক আয়োজিত “শোক বহি” এ মন্তব্য লিখতে গিয়ে কম্পিত হাতে লিখেছিলাম- “আজ এক মানবতা কফিনবন্দি হলো!” সৈয়দ মহসিন আলী’র মৃত্যুতে এ ছাড়া আর কি-ই-বা লিখা যায়!

দুই.
নবম সংসদ নির্বাচনে প্রতিপক্ষ হেবিওয়েট প্রার্থী, বিএনপি সরকারের বেশ ক’বারের অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানকে পরাজিত করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে স্বমহিমায় যখন ঢাকা থেকে মৌলভীবাজার ফিরে আসেন, তখন একদিন মৌলভীবাজারের কাজিরবাজার আপ্তাবউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানীয় সংগঠন “একতা স্পোর্টিং ক্লাব” কর্তৃক সৈয়দ মহসিন আলী এম.পিকে বিশাল সংবর্ধনা দেয়া হয়। তাঁর সাথে আমার ছোটবোন ছড়াশিল্পী মিনারা আজমীকেও কবিতা লেখার অবদানে “মৌলভীবাজারের শিশুকবি সম্মাননা- ২০০৯” স্মারক দেয়া হয়েছিল একই মঞ্চে। সৈয়দ মহসিন আলী এম.পি তখন মিনারাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন- “আমাদের উচিৎ এসব প্রতিভাকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে কাজে লাগানো।” ফিরে আসার সময় নিজের গাড়িতে করে নিয়ে এসেছিলেন আমাদেরকে। সৈয়দ মহসিন আলী’র মতো এ রকম বিনয়ী, উদার ও মুক্তমনা আর কোন পার্লামেন্ট মেম্বারকে কখনো হতে দেখিনি।

তিন.
মৌলভীবাজার পৌরসভা’র চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাহমুদুর রহমান। বর্ষা মৌসুম। মনুনদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একদিন শহরের দোকানপাট ও বাসাবাড়ির মানুষজন সবাই রাস্তায় বের হয়ে গেলেন। সবার মনে আতংক! শহরময় গুজব ছড়িয়েছে- “প্রতিরক্ষা বাঁধের উপর দিয়ে পানি ঢুকছে শহরে!” আমি সেন্ট্রাল রোডের দিকে অগ্রসর হয়ে বন্ধুবর কবি সূর্যদাস তপন এর কে ষ্টুডিওতে হেঁটে হেঁটে গেলাম। মানুষজন দিক্বিদিক ছোটাছুটি করছে। তপনদাকে নিয়ে পোষ্ট অফিসের সম্মুখে গিয়ে দেখি, আরসিসি দেয়াল প্রতিরক্ষা বাঁধের কানায় কানায় পানিতে পরিপূর্ণ! হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি আর দেখছি, বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরক্ষা বাঁধ দেয়াল চুঁইয়ে পানি রাস্তা দিয়ে গঁড়িয়ে পড়ছে।

পৌর চেয়ারম্যান, কমিশনারবৃন্দসহ অনেকেই পেরেশান হয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছেন। পৌরসভা কর্তৃক সিমেন্টের ব্যাগে বালি ভর্তি তৈরি ব্লক ফেলা হচ্ছে। সৈয়দ মহসিন আলী এলেন। এসেই “কইবে হকল আও” বলে তিনি একটি বস্তায় ধরতেই; উপস্থিত সবাই হাতে হাতে করে নিমিশেই ব্লকগুলো পানি আসা লিকে নিয়ে ফেলে দিলেন। আমিও একটি ব্লকে ধরেছিলাম, কিন্তু আরেকজন এসে আমার হাত থেকে নিয়ে নিলেন “তুমি পারতায় নায়, আমারে দেও” বলে। সৈয়দ মহসিন আলী হলেন এ রকমই জননেতা।

চার.
একদিন হযরত সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা বোগদাদী (রহঃ) দরগাহ শরীফের মোতাওয়াল্লী সৈয়দ খলিলুল্লাহ ছালিক জুনেদ আমাকে মোবাইল করে বললেন- “সালেহ কুনানো বা, মহসিনর বাড়িত আইয়ও। আমি বওয়াত আছি। লগে তোমার বইনরেও (মিনারা আজমী) আনতায়, মহসিনে কইছইন।” আমি মিনারাকে নিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী এম.পি’র বাসায় গেলাম। মোতাওয়াল্লী সাহেব অপেক্ষায় ছিলেন। আমাদেরকে সোজা বেডরুমে নিয়ে গেলেন। মন্ত্রী মহোদয় চেয়ারে বসা। পাশে দাড়িয়ে রয়েছে উনার পি.এস। সালাম দিলাম। সালামের জবাব দিয়ে সামনের চেয়ারে বসতে বললেন মন্ত্রী মহোদয়। মোতাওয়াল্লী সাহেব, মিনারা ও আমি চেয়ারে বসলাম। মন্ত্রী মহোদয় বললেন- “হুনছি তুমি বুলে বাক্কা ভালা ভালা কিছু গান লেখছো? দেখি কিতা লেখছো, হুনাওচাই। তাইতো (মিনারা আজমী) সুন্দর সুন্দর ছড়া লেখে!”

  • আমি গান লেখি। গাইতাম পারিনা। গলা ভালানায়
  • আমারওতো গলা সুন্দরনায়। আমি দেখি গাই? গা! গা!!

শুরু করলাম একে একে- “দেশ বিদেশে বুক ফুলাইয়া”, “একাত্তরের রণাঙ্গনে”, “দুর বিদেশি রসিক বন্ধুরে”, “আমি মরলে পাড়াপড়শি” সহ বেশ কিছু গান গাইলাম। এরমধ্যে জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান বাবুল ভাই গিয়ে ঢুকলেন। “একাত্তরের রণাঙ্গনে” গানটা মন্ত্রী মহোদয়কে নিয়ে রচিত। “আমি মরলে পাড়াপড়শি” গানটি শোনে তাঁর পি.এস বললেন- “গানটা আরকুম শাহের?” আমি বললাম- “না, এটা সালেহ শাহের গান!” সবাই একটু হাসাহাসি করলাম। গানটা শোনে মন্ত্রী মহোদয়ের চোখে জল টলমল করছিলো। আমাকে বললেন- “এ বয়সো ইতা গান কেনে লেখলে?” মিনারা স্বরচিত ২/৩টা ছড়া কবিতা আবৃত্তি করলো এবং রাধারমণের ২টা ধামাইলগীত শুনাইলো। মন্ত্রী মহোদয় বাহবা দিলেন। চা নাস্তার ফাঁকে ফাঁকে গান, কবিতা আবৃত্তিসহ বহু বিষয়ে আলোচনা হলো।

সিলেট বেতারে গান জমা দেয়া এবং বেতারের গীতিকারের তালিকাভূক্ত হওয়ার জন্য মন্ত্রী মহোদয় বললেন- “জিতা লাগে, আমার কথা কইছ।” আমার রচিত গবেষণাধর্মী জীবনীগ্রন্থ “হযরত সৈয়দ শাহ্ মোস্তফা (রহঃ)” পুনঃমুদ্রণ করা এবং অন্য বিষয়ে আরেকটি গ্রন্থ রচনার জন্যও আমাকে বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবদ্দশায় আমি এসব করতে পারলামনা! বড়ই দূর্ভাগা আমি। সৈয়দ মহসিন আলী ছিলেন এ রকমই একজন মানুষ; মন্ত্রী।

পাঁচ.
মৌলভীবাজার পৌরসভা’র ৪ বারের সফল কাউন্সিলর মোঃ মাসুদ ভাইয়ের বাসায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সৈয়দ মহসিন আলী উপস্থিত থাকতেন। তাঁদের ছিল চাচা- ভাতিজা (ভাইস্তা) সম্পর্ক। এক প্রতিবাদ সভায় সৈয়দ মহসিন আলী তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন- “মাসুদ একটা বাঘ! বাঘে কখনো ভয় পায়না!” আমি মাসুদ ভাইয়ের অফিসিয়াল ননঅফিসিয়াল যাবতীয় কাজ করার সুবাদে, মাসুদ ভাইয়ের সাথে মন্ত্রী মহোদয়ের যে কি পরিমাণ আত্মার সম্পর্ক ছিল; তা কিছুটা অনুমান করতে পেরেছিলাম।

সৈয়দ মহসিন আলী ছিলেন প্রকৃত একজন জ্ঞানীগুণী মানুষ। তৃণমূল পর্যায় থেকে বিভিন্ন ধাঁপ পেরিয়ে নিজযোগ্যতা এবং সততার গুণে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সমাজকল্যাণমন্ত্রী’র দায়িত্ব পালন করেছেন, শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত। কথায় কথায় একদিন বললেন- “মন্ত্রী মহসিন, এম.পি মহসিন আজ আছে কাল নেই বা থাকবেনা! কিন্তু সৈয়দ মহসিন আলী আজীবন থাকবে!”


আজ আমরা তাঁকে উপলব্দি করছি। তাঁর শূন্যতা অনুভব করছি; তাঁকে স্মরণ করছি! তিনি ছিলেন একজন মানুষ। মানবিয় দোষগুণ তাঁর মাঝে বিরাজমান ছিল। তাঁর জীবদ্দশায় আমরা শুধু তাঁর নেগেটিভ দিকগুলো সমালোচনা করেছি। কিন্তু ভালো দিকগুলো নিয়ে কোন আলোচনা করিনি কখনো। একবুক হতাশা নিয়ে তিনি পাড়ি জমালেন পরপারে!


ভালো থেকো সৈয়দ মহসিন আলী, ভালো থেকো চাচা।
০৫/০৯/২০১৬ইং, বর্ণ কুঠির।

পুনশ্চঃ আজ ১৪ সেপ্টেম্বর। মৌলভীবাজারের মানবদরদী খ্যাত সৈয়দ মহসিন আলী’র আজ ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৫ইং সালের আজকের এই দিনে তিনি ইহলোক ত্যাগ করে পরলোক গমন করেন। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণিয় করে রাখার জন্য একটি সংকলন প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন মৌলভীবাজর পৌরসভা’র ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ আসাদ হোসেন মক্কু ভাই। তিনি সৈয়দ মহসিন আলীকে নিয়ে একটি লেখা দিতে বলেছিলেন। এটা সেই লেখা।

সালেহ আহমদ (স’লিপক): সাংবাদিক, কবি, আহবায়ক- আমরা মাদক নিবারণ করি (আমরা মানিক)।