সুমন শাহনেওয়াজ এর ৪টি কবিতা
আমি আর আসবো না ফিরে কখনো কোনদিন
আমি আর আসবো না ফিরে কখনো কোনদিন
এই স্রোতস্বিণী ধানসিঁড়ি নদীর তীরে
গাঙচিল বুনোহাঁস ধানশালিক ধবল বক
নাম না জানা কতো অতিথি পাখির বেশে।
আমি আর আসবো না ফিরে কখনো কোনদিন
খেয়া তরী বেয়ে বেয়ে পদ্মা মেঘনা যমুনা
কীর্তণখোলা মধুমতি ধানসিঁড়ি নদী বেয়ে বেয়ে
চৈত্রের ঝিঁঝিঁ ডাকা উদাস দুপুরে।
আমি আর আসবো না ফিরে কখনো কোনদিন
বাউলের একতারা হাতে গেরুয়া রঙের কাপড়ে
তোমার বাড়ির দুয়ারে চৈত্রের পিপাসা মেটাতে।
আমি আর আসবো না ফিরে কখনো কোনদিন
দাঁড়কাক বেশে তোমার বাড়ির উঠানে
কার্তিক নবান্নের পিঠা পায়েসের উৎসবে।
আমি আর আসবো না ফিরে কখনো কোনদিন
ভিড়াবো না মোর খেয়া তরী তোমার বাড়ির ঘাটে।
আমি আর আসবো না ফিরে কখনো কোনদিন
শীতের তীব্রতা ভেঙে একটুখানি উষ্ণতার খোঁজে
রাত্রি দ্বিপ্রহরে শতভাগ আবেগী চুম্বনের আহ্বানে।
আমি আর আসবো না ফিরে কখনো কোনদিন
এই স্রোতস্বিণী ধানসিঁড়ি নদীর ঘোলা জলে
গাঙচিল ধানশালিক বুনোহাঁস ধবল বক
আর নাম না জানা কতো অতিথি পাখির বেশে।
২৮/০৪/২৪ইং, পিরোজপুর।
+++++++++++++++++++++++++++++
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
ছিলো স্রোতস্বিণী ধানসিঁড়ি নদীর ঢেউ।
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
ঝোপঝাড়ে ছিলো বুনোহাঁস ডাহুক ধান শালিক
ধানসিঁড়ি নদীতে মাছ শিকারে ব্যস্ত ছিলো
গাঙচিল ধবল বক আর নাম না জানা কতো অতিথি পাখি।
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
সোনালী ধানের ক্ষেতে ছিল ধান শালিক।
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
শিমুলের ডালে বসে ছিল রাতজাগা লক্ষ্মী পেঁচা।
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
ছিলো সাইবেরিয়া থেকে আগত
নাম না জানা কতো অতিথি পাখি।
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
ছিলো সাত সকালে গাঁয়ের রাখালী বধূর
শীতের কুয়াশামাখা ভোরে
চুলোর আগুনে ধান সিদ্ধ করার কতো আয়োজন।
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
ছিলো কতো মনমাতানো আননদ উল্লাস।
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
ছিলো সাত সকালে শিশির সিক্ত ভেজা শিউলি সকাল।
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
ছিলো আকাশ আর কাঁদা মাটিতে মাখামাখি।
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
ছিলো শরতের অগোছালো কাশবন।
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
ছিলো উদাস দুপুরে
বাগানের ঝিঁঝিঁ পোকা ধরার ব্যর্থ চেষ্টা।
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
ছিলো স্রোতস্বিণী ধানসিঁড়ি নদীর ঢেউ।
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
ছিলো পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়া রঙে রাঙানো
তোমার সিঁথির সিঁদুরের রঙ।
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
ছিলো ভালোবাসার কাঙ্ক্ষিত মিলন মোহনা।
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
ছিলো গাঙচিল বুনোহাঁস ধবল বক
আর নাম না জানা কতো অতিথি পাখি।
একদিন তুমি ছিলে; আমি ছিলাম
ছিলো আকাশ ছোঁয়া কতো স্বপ্ন।
০১/০৫/২৪ইং
+++++++++++++++++++++++
একদিন তোমায় নিয়ে
একদিন তোমায় নিয়ে অস্তমিত হবো
ধানসিঁড়ি নদীর পশ্চিম তীরে
কোন এক সূর্যাস্তী গোধূলির
আবীর মাখা জোনাকি জ্বলা সন্ধ্যায়।
একদিন তোমায় নিয়ে হাঁরিয়ে যাবো
ডুব সাঁতারের ছলে
এই স্রোতস্বিনী ধানসিঁড়ি নদীর ঘোলা জলে।
একদিন তোমায় নিয়ে ভেসে যাবো
সাদা মেঘের ভেলায় ভেসে ভেসে
শরতের অগোছালো কাশবনে।
একদিন তোমায় নিয়ে হাঁরিয়ে যাবো
লোকচক্ষুর অন্তরালে
অচেনা অজানা বহুদূর।
একদিন তোমায় নিয়ে মিশে যাবো
শীতের স্নিগ্ধতায় তীব্রতা ভেঙে
কোন এক রাত্রি দ্বিপ্রহরের নগ্ন আহবানে
একটুখানি উষ্ণতার খোঁজে।
একদিন তোমায় নিয়ে মিশে যাবো
আকাশ আর কাদামাটিতে মাখামাখি
ধানসিঁড়ি নদীর তীরে এই সোঁদা মাটির গন্ধে
আমাদের কাঙ্খিত মিলন মোহনায়।
একদিন তোমায় নিয়ে মিশে যাবো
গেরুয়া রঙের কাপড়ে
ঝিঁঝিঁ ডাকা চৈত্রের উদাস দুপুরে
শাল পিয়ালের বনে।
একদিন তোমায় নিয়ে মিশে যাবো
এলোমেলো খোলা চুলে
সুগন্ধি ভেজা নেশাতুর ঘ্রাণে।
৩০/০৪/২৪ইং
+++++++++++++++++++++
তোমার সিঁথির সিঁদুরের রঙে
পৃথিবীর সব রঙ আজ মিশে গেছে
আমার পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়া বনে
তোমার সিঁথির সিঁদুরের রঙে।
পৃথিবীর সব আহ্বান আজ মিশে গেছে
তোমার রাত্রি দ্বিপ্রহরের নগ্ন আহবানে।
পৃথিবীর সব প্রেম আজ মিশে গেছে
তোমার এলোমেলো খোলা চুলে
সুগন্ধি ভেজা নেশাতুর ঘ্রাণে।
পৃথিবীর সব রঙ আজ মিশে গেছে
আমার পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়া বনে
তোমার সিঁথির সিঁদুরের রঙে।
পৃথিবীর সব তৃষ্ণা আজ মিশে গেছে
তোমার গোলাপী ঠোঁটের চিলেকোঠায়
আবেগী চুম্বনের আহ্বানে।
পৃথিবীর সব কোলাহল আজ মিশে গেছে
শীতের স্নিগ্ধতায় তীব্রতা ভেঙে
তোমার বুকের গহীনে
একটুখানি উষ্ণতার খোঁজে।
পৃথিবীর সব প্রেম আজ মিশে গেছে
শরতের অগোছালো কাশবনে
এক সূর্যাস্তী গোধূলির আবীরমাখা
জোনাকি জ্বলা সন্ধ্যায়।
পৃথিবীর সব প্রেম আজ মিশে গেছে
চন্দনের সহমরন চিতায়
শেষকৃত্য সম্পন্ন অনুষ্ঠানে।
পৃথিবীর সব উষ্ণতা আজ থেমে গেছে
ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের
লাভা উদ্গিরণের জ্বালামুখে।
পৃথিবীর সব রঙ আজ মিশে গেছে
আমার পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়া বনে
তোমার সিঁথির সিঁদুরের রঙে।
২৮/০৪/২৪ইং, রূপনগর, মিরপুর, ঢাকা।