আজ-  ,


সময় শিরোনাম:
«» কুলাউড়ায় যুব র‌্যালী,মানববন্ধন ও যুব সমাবেশ অনুষ্ঠিত «» সাংবাদিক মশাহিদ আহমদ এর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার করার দাবী “বোবারথল” এলাকার বাসিন্দাদের «» কমলগঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুলের মতবিনিময় সভা «» নওগাঁয় কৃষকের মাঝে দুটি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন  বিতরণ করলেন — সাংসদ সদস্য  «» বগুড়ায় আলী হাসান হত্যা মামলার প্রধান আসামি সবুজ গ্রেফতার «» বগুড়া আদমদীঘিতে মাদকবিরোধী অভিযানে ৩ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার  «» Reminder: ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ (২য় ধাপ)-এ অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ ও টিআইবির পর্যবেক্ষণ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার/প্রকাশ/সম্প্রচার প্রসঙ্গে «» মৌলভীবাজার আসছেন পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন  «» খেলাঘর আসর সিলেট জেলা কমিটির প্রতিনিধি সভা অনুষ্ঠিত «» ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ (২য় ধাপ)-এ অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ ও টিআইবির পর্যবেক্ষণ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচার/প্রকাশ/সম্প্রচার প্রসঙ্গে

ডা. মুহসিনা খানম এর ২টি কবিতা

ডা. মুহসিনা খানম এর ২টি কবিতা

রাখি না সে খবর

তুমি আছো বলেই আমি আর কিছু ভাবি না
তুমি ভালোবাসো বলেই
আমি নিত্য তৃপ্তির সাথে পান করি হলাহল!
একদম থামি না।

তুমি ছাড়া আর কেউ জানে না আমার খবর!
তুমি ছাড়া আর কেউ রাখে না আমার খবর!
উপরটায় একদম
ভালোবাসার বন্যা বয়ে যায়
ভিতরটা ধুধু বালুর চর!
শুধু তুমি ভালোবাসো বলেই
আমি আর নেইনা সে খবর!
তোমায় কাছে পাবার ঘোর নেশাতে কাঁটে অষ্টপ্রহর
পাছে কে এলো আর কি গেলো তাই
রখি না সে খবর!!
২৭/০৪/২০২৪ইং,
রূপনগর আবাসিক এলাকা, ঢাকা।

++++++++++++++++++++++

শতবর্ষী মিছিল

মে দিবস, এইডা আবার কি বুবু?
শেফালির এমন প্রশ্নে ঘুরে তাকায় রিনা।
তুই বুঝি অহনো মে দিবস বুঝস না!
আরে মে দিবস অইলো
আমাগো লাহান শ্রমিকগো
অধিকার আদায়ের দিন।
এই দিন আমাগো ন্যায্য পাওনা আদায় হইছে।
একশো বছরেরও আগে, এর লাগি কত জীবন গেছে!

শেফালী মন দিয়ে রিনার কথা শোনে
বুবু, আমরার ন্যায্য পাওনা কি আমরা পাই?
পাঁচ মাস অইলো বেতন পাইনা
ঐ যে ডিসম্বর মাসো বেতন দিলো, হাফ বেতন!
হেরপর দেই দিবো দিবো কইরা আইজ কয়মাস?
আমরার বুঝি পেডো ক্ষুধা নাই?
দোহানদার আর বাহি দেয় না!
অন্য দোহানো যাই, কয়দিন পর অন্য দোহানো!

এক শ্বাসে বলে শেফালী
আর চোখ দিয়ে আগুন ঝরে
কারণ, চোখে তার আর জল নেই!

রিনা শ্রমিকনেতৃ
কাল সকালে তার মে দিবসের মিছিলে যেতে হবে
তাই আজ রাতে অনেক শ্রমিককে
নিজের কাছে রেখেছে!
শেফালী তার গ্রামের মেয়ে, দূর সম্পর্কের বোন।
সে-ই এনে ফ্যাক্টরীতে কাজে দিয়েছে।
রিনা প্রতিদিন হাজার শ্রমিক সামলায়
তাই শেফালীর খবর নেওয়া হয় না!

বুবু, জানো এ কারহানায় দুই রহম আইন চলে!
মজনু ভাই, তারা ঠিহই বেতন পায় মাসে মাসে
খুব বালা মানুষ, দয়ার শরীর, অনেক ক্ষেমতাহ
এই এলাকায় ছয় সাতটা গার্মেস হেইলা চালায়!
কোনো জামিলা অইলেই বস মজনু বাইরে ডাহে
মজনু ভাই তার বাহিনী লইয়া একটা চক্কর মারে
ব্যস হগল ঠান্ডাহ, আর কারো মুহে রাও নাই!
রাও কইরা জানডা দিবো! হের লাগি সব চুপ।

তুই এতো কতা কই পাছ শেফালী?
অহন ঘুমা, কাইল সহাল বেলা মিছিল!
সুন্দর সাজানো টেরাক
সবাই মাথায় লাল কাপড় বান্দা
সাথে ঢোল বাদ্য, হাতে বেনার, প্লেকার্ড
দুনিয়ার মজদুর এক হও
আমাদের দাবি মানতে হবে
শ্রমিকের অধিকার দিতে হবে।
মে দিবসের অঙ্গীকার
চাই ন্যায্য অধিকার!
কথাগুলো বলতে বলতে রিনা উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে।
কাল সহালে সে-ই মিছিল ধরবো
আর কেউরে ধরতে দিবো না
এতে বড়ো স্যার তার উপর ভরসা বাড়াইয়া দিবো।

শেফালীর ঘুম ধরে না
তার হাজার কথা মনে পরে।
মজনু ভাইর দয়ার শরীল, মনডাও বালা
আমার হোজ হবর রাহে, মাঝে মইদ্যে আহে
সুক-দুক্কের কতা কয়, মনডা হাল্কা করে
তার বউডা বালা না, তার যত্ন করে না।
আমি তারে কই- মজনু ভাই
বেতন না পাইলে কি হায়াম?
পেডেতো খুদা লাগে, দোহানো বাহি দেয় না!
হুদা নুন ছাড়া হিদ্দ মিডা আলু হাইয়া
কয়দিন অফিস করন যায়?
সহালে মিডা আলু হিদ্দ, দুপুরে মিডা আলু হিদ্দ
রাইতেও, আমার গতর চলেনা
অফিসো কাম করতে আত চলে না
গাওডা কাপে, ঝিমানি আহে, পেডে ক্ষুধা!
আমার চাইরডা ভাত চাই, নুন দিয়া!
আর কিচ্ছু লাগবো না।
হের পরথোন মজনু ভাই আমারে কিছু দেয়!
হে দিয়াই চাউল কিনি, কয়ডা হুক্কি কিনি, নুন কিনি
নুন দিয়া হুক্কি দিয়া ডইল্যা কয়ডা ভাত হাই।

মজনু ভাই আইলে তাই খাতির যত্ন করি!
কি হরাম, ভাতের ক্ষুধা বড় কষ্টের!
দেশো মায় যে কেমনে চলে আল্লায় জানে!
বাবায় মললো, ভাতের কষ্টে আইলাম ডাহা!

রিনা মন দিয়ে শোনে শেফালীর কথা
কিন্তু ভান করে আছে সে গভীর ঘুমে!
রিনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
পেটের দায়ে রিনাও একসময়
মজনুদের আবদার রেখেছে
প্রেমিকা হয়ে থেকেছে, তার এক ফাঁকে
কখন অবচেতনে মজনুকে মন দিয়েছেহ!
আজ এসব ভাবে না রিনা।
কারণ সে অহন বড় বসের যত্নআত্বি করে!
সে অহন নেতৃ, বসের কথা মতো নেতৃত্ব দেয়
শ্রমিকগো ঠান্ডা রাখতে যা লাগে সব করে।
সেও মজনুর মত ঠিকঠাক বেতন পায়
বকশিস পায়, কিন্তু শ্রমিকগো লগে বইয়া
হিদ্দ মিডা আলু খায়, আর বসেরে গাইল পারে!
বুঝায় হেও বেতন পায়নাহ!
রিনারে চুপ দেখে শেফালী আস্তে নাড়া দেয়
বুবু, গুমাই গেলা?
হুম, কি কস?
বুবু এই যে সাজাইন্না টেরাক, এতো বেনার
শ্রমিকরার খানা এতো টেহা কেডা দিবো?
সবেইতো পাঁচ মাস বেতন পায় না!
রিনাকে আশ্বাস দিয়ে শেফালী বলে
চিন্তা নাই, সব বস আগেই দিয়া দিছে!
লাগলে আরও দিবো
আইজ শ্রমিকগো অধিকার আদায়ের দিন
আমাগো বস বালা মানুষ
ঠোঁটের কোনায় এক চিলতা হাসি লুকায় সে!

শেফালীর চোয়ালটা শক্ত হয়ে যায়
বসের ট্যাহায় ভাড়া করা টেরাক, হাওনদাওন
আমুদ ফূর্তি, ডোলবাদ্যি!
শেফালী টেরাক থাইক্কা নাইম্মা পরে
মাতার লাল কাপড় হুইল্যা ফেলায়
নিজের গতরের ওড়নাটা নিজেই ছিড়ে
টুকরা টুকরা করে, শ্রমিকরার কপালে বান্দে
ঝাড়ুদার খালার ঝারুডা আতো লয়
কারখানার দিকে পা বাড়ায়
আমারার দাবি আমারার দাবি
মানতে হবে মানতে হবে
তার পিছেপিছে মিছিলটা লম্বা হয়
বাঁধ ভাঙা বানের পানির মতো সে মিছিল!
আজ ভাসায়ে নিবে সব।
মে দিবসের অঙ্গীকার
দূর্নীতিবাজ রক্ত চোষা মালিকের কবর!
হঠাৎ কোথা থেকে মজনু এসে
শেফালীর টুটি চেপে ধরলো!
মাগী তোর ভিতরে এতো খাজ?
শেফালী আর নিঃশ্বাস নিতে পারে না
এইডা হেই দরদী মজনু ভাই!
শেফালী তারে চিনতে পারে না
প্রাণপণ চেষ্টা করে সে মুক্ত হতে
শেফালী একটা ত্রিশূল আতো লয়
বড় পূজার দূগ্যা মূর্তির লাহান!
শেফালীর মুখ থেকে গোঙানির শব্দ বের হয়।

রিনা তারে ধাক্কা দেয়, এ শেফালী, ওট
মিছিলে যাওন লাগবো
আমার টেরাক আগে থাকবো
মনজুর টেরাকের আগে
তাইলে আমার পোরমোশোন অইবো
এলাকার নেতৃ, মজনুরে আমি…

শেফালীর ঘুম ভেঙে যায়
সে পাশ ফিরে শোয়, চোখ খোলা!
একটা মিছিল, শ্রমিকের রক্তের স্রোত
আমাগো বেতন দিয়া দেও, দিতো অইবো!
শেফালী দ্যাহে সবাই তার লাহান
গতরের ওড়না মাথায় বান্ধা
লাঠির মাতায় গতরের জামা
শেফালী মিছিল ধরে
দুনিয়ার মজদুর এক হও
মে দিবসের অঙ্গীকার-
রক্ত চোষা মালিকের কবর!
মালিক শ্রমিক ভাই ভাই
দেশ গঁড়ার বিকল্প নাই।
মালিক খাবে-শ্রমিকও খাবে
আমরার দেশ এগিয়ে যাবে।
কেউ খাবে আর কেউ খাবে না
তা হবে না, তা হবে না!
মিছিলডা চলছে
মে দিবসের শতবর্ষী মিছিল
কতো বছর চলবো কে জানে!