আজ-  ,


সময় শিরোনাম:
«» ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মৌলভীবাজার পৌর শাখার বদর দিবসের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত «» ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তর কর্তৃক তদারকি অভিযান ও জরিমানা «» নওগাঁয় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উদযাপন «» মৌলভীবাজারের জুড়ীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠে একই পরিবারের ৫জন নিহত ও গুরুতর আহত-১ «» স্বাধীনতা দিবস ও মাহে রমজান উপলক্ষে ৩০০ পরিবারের মাঝে ইফতার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ «» বগুড়া আদমদীঘিতে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন «» সিলেটে পথচারীদের মাঝে ইফতার বিতরণ করেছে জমিয়ত «» বগুড়ায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে শহিদ উদযাপন «» প্রবাসী অধিকার বাংলাদেশ ফোরাম এর উদ্যোগে কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পণ «» মৌলভীবাজারে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

কবি নজরুল : বাংলা সাহিত্যে স্বপ্রতিভায় চির সমুজ্জ্বল-এহসান বিন মুজাহির

জাতীয় কবি কাজী নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা :
বাংলা সাহিত্যে স্বপ্রতিভায় চির সমুজ্জ্বল কবি নজরুল
এহসান বিন মুজাহির

 

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বহুমুখী প্রতিভার অধিকারি এক বিরল সাহিত্য ব্যক্তিত্ব। বাংলা সাহিত্যে যার আবির্ভাব ধূমকেতুর মতো, তিনি হলেন আমাদের জাতীয় কবি, নিপীড়িত মানুষের কবি, বিদ্রোহী কবি, তারুণ্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কাজী নজরুল ইসলামকে চেতনা ও জাগরণের কবি বলা হয়। বাংলা সাহিত্য জগতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে শুধু উন্নত ও সমৃদ্ধই করেননি, বিশ্ব দরবারে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিতও করেছেন। আজ ২৭ আগস্ট জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর মৃত্যুবার্ষিকী। ১৮৯৯ সালের ২৫ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কবি নজরুল।

 

বাংলা সাহিত্য জগতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। মৌলিক কাব্য-প্রতিভার ছাপ রেখে গেছেন বলেই এখনও তিনি যুগ প্রবর্তক কবি হিসেবে স্বীকৃত। তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে শুধু উন্নত ও সমৃদ্ধই করেননি, বিশ্ব দরবারে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিতও করেছেন। বিদ্রোহী কবি বলে সমাধিক খ্যাত কবি নজরুল ইসলামে মরমি কবিতা, অসংখ্য গজল, গান, হামদ-নাত, আজও পাঠক-শ্রোতাকে সমভাবে আপ্লুত করে রাখে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল যে বিশাল সাহিত্য ভান্ডার রচনা করেছেন তার তুলনা বিরল। তিনি যে কত বড় কবি ও সাহিত্যিক ছিলেন তা বলে শেষ করা যাবে না। জাতীয় কবি, নিপীড়িত মানুষের কবি, তারুণ্যের কবি কাজী নজরুল মুলত একজন কবি হলেও সাহিত্যের সব স্থরে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। নজরুল শুধু শিল্পী-সূরকার, গীতিকার, কবি, উপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক, সম্পাদক ও আপোষহীন সৈনিকই নন। তিনি ছিলেন সেকালের শক্তিধর এক কলমযোদ্ধা। তাঁর লিখনীতে ফুটে ওঠেছে বিদ্রোহী মানুষের চাওয়া-পাওয়া। কবি তাঁর ক্ষুরধার লিখনীর মাধ্যমে অন্যায়, জুলুম ও অত্যাচারে বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। যা ভারতবর্ষে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি ও তাদের অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ছিল বজ্রের ন্যায় কঠিন-‘হিরার চেয়ে ধারালো।

 

তিনি সর্বপ্রথম এই উপমহাদেশের মজলুম মানুষকে সরাসরি বিট্রিশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। কলমযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। দৃপ্তকণ্ঠে তিনিই সর্বপ্রথম বাঙালি কলমসৈনিক যিনি উচ্চারণ করেছিলেন, ‘কারার ঐ লোহ কপাট/ভেঙে ফেল কর রে লোপাট/রক্ত জমাট/শিকল পূজায় পাষাণ বেদী/ওরে ও তরুণ ঈশান/বাজা তোর প্রলয় বিষাণ/ধ্বংস নিশান/উড়ুক প্রাচীর/প্রাচীর ভেদি। তিনিই পরাধীনতার শিকল ভেঙ্গে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছেন জাতিকে। তার জাগরণী ও বিদ্রোহী কবিতা, লাথি মার ভাঙরে তালা/যত সব বন্দী-শালায়/আগুন জ্বালা ফেল উপাড়ি। ‘এই শিকল পরা ছল মোদের এই শিকল পরা ছল/এই শিকল পরেই শিকল তোদের করব রে বিকল’। বল বীর, চির উন্নত মম শির। বা মহাবিদ্রোাহী রণক্লান্ত/আমি সেই দিন হবো শান্ত, এমন সাহসী কাব্য লেখনীর মাধ্যমে এদেশবাসীকে জাগিয়েছেন।

 

পরাধীনতা, শোষণের কবল থেকে জাতিকে প্রথম স্বাধীন ও মুক্ত হওয়ার ডাক দিয়েছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে মানুষকে মুক্তিসংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছেন, জাগ্রত করেছেন জাতীয়তাবোধ। তার কলম শাসকের অস্ত্রের চেয়ে বেশি শক্তিমান ছিল। তিনি ছিলেন মানবতার কবি। অবদমিত, ষড়যন্ত্র ও হিংসায় আক্রান্ত আত্মবিস্মৃতি জাতিকে আগে কেউ এই আহবান জানাননি। তার বাবা ছিলেন স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম। ছোট বেলায় নজরুলের ডাকনাম ছিলো‘দুখু মিয়া’। তিনি বাংলা সাহিত্যে কবি নজরুল স্বপ্রতিভায় চির সমুজ্জ্বল।

 

কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ছোটগল্প ও গান-গজল সব শাখাতেই বিচরণ ছিল কাজী নজরুল ইসলামের। কেবল গানই সৃষ্টি করেছেন চার হাজারের কাছাকাছি। এত গান পৃথিবীতে আর কোন কবি-গীতিকার লিখেছেন বলে আমাদের কাছে জানা নেই। গান ছাড়াও রয়েছে তার অজস্র ছড়া-কবিতা। লিখেছেন বেশ কিছু ছোট গল্প ও উপন্যস। লেখালেখির পাশাপাশি সুর সৃষ্টি ও সংগীত পরিচালনাও করেছেন তিনি। এমন কি চলচ্চিত্র পরিচালক, সুরকার, গায়ক ও অভিনেতা হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। নবযুগ, অর্থ সাপ্তাহিক, ধুমকেতু, লাঙল ইত্যাদি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব ও পালন করেছেন। তিনি ছিলেন তৎকালীন যামানার কাঁটাভরা দুর্গম পথের এক নির্ভীক সাংবাদিকও। তিনি বড়দের জন্য লিখেছেন অনেক অনেক প্রবন্ধ-গল্প ও কবিতা। তাই বলে নজরুল ছোটদের ভুলে থাকেননি। নজরুল ছোটদের জন্য রেখে গেছেন শিশুসাহিত্যের এক সুবিশাল ভান্ডার। ‘নবযুগ, অর্থ সাপ্তাহিক, ধুমকেতু, লাঙল ইত্যাদি পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব ও পালন করেছেন।

 

কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য জীবন মাত্র ২৩ বছর হলেও সাহিত্য জীবন অত্যন্ত সমৃদ্ধ। কবিতা, সংগীত, ছোট গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটকসহ সবকিছু মিলিয়ে তার রচনা সংখ্যা অনেক। তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা মুক্তি (১৩২৬) বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকায় শ্রাবণ সংখ্যায়। ৩টি ছিল কবিতা। প্রথম প্রবন্ধ ‘তুর্ক মহিলার ঘোমটা খোলা’ প্রকাশিত হয় ‘সওগাতে’ ১৩২৬ সনে, কার্তিক সংখ্যায়। ছাপার হরফে আত্মপ্রকাশ ১৯১৯ সালে। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা লেখা হয় ১৯২১ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয় ১৯২২ সালের জানুয়ারিতে। প্রথম গদ্য প্রবন্ধ ‘যুগবাণী’ (১৯২২)। প্রথম কবিতা গ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ (১৯২২)। ২৩ বছরের শিল্প জীবনে নজরুল লিখেন ২২টি কবিতা গ্রন্থ, ৩টি কাব্যানুবাদ, ২টি কিশোর কাব্য, ৩টি উপন্যাস ৩টি গল্প গ্রন্থ ৩টি নাটক ২টি কিশোর নাটিকা ৫টি প্রবন্ধ গ্রন্থ, ১৪টি সংগীত গ্রন্থ।

 

কবিতা : অগ্নিবীণা (কবিতা) ১৯২২, সঞ্চিতা (কবিতা সংকলন) ১৯২৫, ফনীমনসা (কবিতা) ১৯২৭, চক্রবাক (কবিতা) ১৯২৯, সাতভাই চম্পা (কবিতা) ১৯৩৩, নির্ঝর (কবিতা) ১৯৩৯, নতুন চাঁদ (কবিতা) ১৯৩৯, মরুভাস্কর (কবিতা) ১৯৫১, সঞ্চয়ন (কবিতা সংকলন) ১৯৫৫, নজরুল ইসলাম : ইসলামী কবিতা (কবিতা সংকলন) ১৯৮২ ।

 

কবিতা ও সংগীত: দোলন-চাঁপা (১৯২৩), বিষের বাঁশি (১৯২৪), ভাঙ্গার গান ( ১৯২৪), ছায়াানট (১৯২৫), চিত্তনামা (১৯২৫), সাম্যবাদী (১৯২৬), পুবের হাওয়া (১৯২৬), সর্বহারা (১৯২৬), সিন্ধু হিন্দোল (১৯২৭) , জিঞ্জীর (১৯২৮), প্রলয় শিখা (১৯৩০, শেষ সওগাত (১৯৫৮) ।

 

সংগীত: বুলবুল (গান) ১৯২৮, সন্ধ্যা (গান) ১৯২৯, চোখের চাতক (গান) ১৯২৯, নজরুল গীতিকা (গান সংগ্রহ) ১৯৩০, নজরুল স্বরলিপি (স্বরলিপি) ১৯৩১, চন্দ্রবিন্দু (গান) ১৯৩১, সুরসাকী (গান) ১৯৩২, বনগীতি (গান) ১৯৩১, জুলফিকার (গান) ১৯৩১, গুল বাগিচা (গান) ১৯৩৩, গীতি শতদল (গান) ১৯৩৪, সুর মুকুর (স্বরলিপি) ১৯৩৪, গানের মালা (গান) ১৯৩৪, স্বরলিপি (স্বরলিপি) ১৯৪৯, বুলবুল দ্বিতীয় ভাগ (গান) ১৯৫২, রাঙ্গা জবা (শ্যামা সংগীত) ১৯৬৬ ।

 

ছোট গল্প : ব্যাথার দান (ছোট গল্প) ১৯২২, রিক্তের বেদন (ছোট গল্প) ১৯২৫, শিউলি মালা (গল্প) ১৯৩১ ।

 

উপন্যাস : বাঁধন হারা (১৯২৭), মৃত্যুক্ষুধা (১৯৩০), কুহেলিকা (১৯৩১) ।
নাটক : ঝিলিমিলি (নাটক) ১৯৩০, আলেয়াা (গীতিনাট্য) ১৯৩১, পুতুলের বিয়ে (কিশোর নাটক) ১৯৩৩, মধুমালা (গীতিনাট্য) ১৯৬০, ঝড় (কিশোর কাব্য-নাটক) ১৯৬০, পিলে পটকা পুতুলের বিয়ে (কিশোর কাব্য-নাটক) ১৯৬৪ ।
প্রবন্ধ: যুগবানী (১৯২৬), ঝিঙ্গে ফুল (১৯২৬), দুর্দিনের যাত্রী (১৯২৬), রুদ্র মঙ্গল (১৯২৭), ধুমকেতু (১৯৬১)। (সুত্র : আবদুল মান্নান সৈয়দ-নজরুল ইসলাম কবি ও কবিতা, নজরুল একাডেমী ঢাকা-প্রথম প্রকাশ ২৯ আগস্ট ১৯৭৭)।

 

নিম্নে কবি নজরুল ইসলামের কয়েকটি কবিতার প্রথম কয়েকটি লাইন উপস্থাপন করা হলো।
শিশুতোষ কবিতা :‘আমি হবো সকাল বেলার পাখি, সবার আগে কুসুমবাগে ওঠবো আমি ডাকি, ভোর হলো দোর খোল খুকমনি ওঠরে, ঐ ডাকে জুঁই শাখে ফুল খুকি ছোটরে’।

 

বিদ্রোহী কবিতা : ‘যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণভুমে রণিবে না,
বিদ্রোহী রণক্লান্ত, আমি সেই দিন হবো শান্ত’। ‘চল চল চল, ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’। ‘দুর্গম গিরি, কান্তর-মরু দুস্তর পারাবার’।

 

প্রতিবাদী কবি : ‘কারার ঐ লৌহ কপাট, ভেঙ্গে ফেল, কর রে লোপাট, রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী, ওরে ও তরুণ ঈশান’। ‘আমরা শক্তি আমরা বল,আমরা ছাত্রদল’।

 

সাম্যবাদী :
ইসলামে বলে, সকলের তরে মোরা সবাই, সুখ দুঃখ সমভাগ করে নেবো সকলে ভাই’। ‘গাহি সাম্যের গান, যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান, যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-খৃষ্টান।

 

ইসলামী সংগিত :
‘বাজিছে দামামা বাঁধরে আমামা, শির উচুঁ করি মুসলমান, দাওয়াত এসেছে নয়াজামানার, ভাঙা কেল্লায় ওড়ে নিশান’।

 

নাতে রাসূল (সা.) :
‘ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ, এলোরে দুনিয়ায়, আয়রে সাগর আকাশ বাতাস, দেখবি যদি আয়’। ‘তোরা দেখে যা মা আমিনা মায়ের কোলে, তোরা দেখে যা, মধু পূর্ণিমার সথা চাঁদও দোলে’।

 

হামদে তায়ালা :
‘শোন শোন ইয়া ইয়া এলাহী আমার মোনাজাত’ । ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’।

 

বড় দুঃখের বিষয় হল যে, নজরুল একজন মানবতাদী কবি, যিনি সাধারণ মানুষের জন্য লিখেছেন, মানবতার গান গেয়েছেন, স্বাধীনতার সংগ্রাম করেছেন। কবি নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সত্য, কিন্তু আমরা আজ তাকে মূল্যায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছি। নজরুলকে উচ্চাসনে বসিয়ে দিয়ে তাঁর থেকে মই কেড়ে নিয়েছি। নজরুল যে বিদ্রোহের গান গেয়েছিলেন সেই বিদ্রোহ আজ রহিত হয়ে গেছে! বাঙালি মুসলমান আজ নির্জীব-অসার।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে নজরুলের অবস্থান দেখলে মনে হবে যে বাংলার সবচেয়ে অপ্রসিদ্ধ কবি! নজরুল নিভু নিভূ আলোয় কোনমতে টিকে আছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যেখানে বাংলা বিভাগ রয়েছে, সেখানে নজরুল সাহিত্য থেকে স্বল্প পরিসরে কবি নজরুলিকে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

 

আমাদের দেশে নজরুল অনুশীলন অত্যধিক মাত্রায় কম হচ্ছে। নজরুল ইনস্টিটিউট নজরুল চর্চায় যে অবদান রাখছে, তাও খুব সামান্য। বাংলা একাডেমিও উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান রাখছে না। জাতীয় পর্যায়ে নজরুলচর্চা আমাদের দেশে হচ্ছেই না বললে চলে। আমরা তাঁকে চেতনায় ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছি। কবি নজরুল ইসলামের মূল্যায়ন অন্য সব কবির চেয়ে ভিন্ন মাত্রায় বেশি হওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু হচ্ছে এর বিপরীত। অন্যান্য কবির জন্ম এবং মৃত্যুবার্ষিকীতে যেভাবে বর্ণিল বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা ও নানা আয়োজন করা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের বেলায় এমনটি চোঁখে পড়ে না।

 

তাইতো কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি খিলখিল কাজী দুঃখভরা কণ্ঠে বলেছেন, ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের চর্চা শুধু জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতেই সীমাবদ্ধ। এই দুটি দিন ছাড়া কবিকে সেইভাবে চর্চা বা স্মরণ করা হয় না’। যা সত্যিই কিন্তু দুঃখজনক। অথচ বাংলা সাহিত্যে-সংস্কৃতি, দেশপ্রেম, আন্দোলনসহ কোন দিকে থেকেই নজরুলের ভূমিকা ছোট করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। তিনি চিরকাল শোষিত-নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কাজ করেছেন। বাংলা সাহিত্য ও সংগীত জগতে তিনি নিয়ে এসেছেন ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাস’। বাংলা সাহিত্যে মুসলিম সাহিত্যিক হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অনস্বীকার্য। জাতীয় কবিকে স্বল্প মূল্যায়ন অতি দুঃখজনক! তার প্রতি অবহেলার একমাত্র কারণ তিনি ইসলামী চেতনা ও আদর্শকে পুরোপুরিভাবে বিসর্জন দিতে পারেন নি; ফলে নজরুল রয়ে গেলেন বাঙালী সমাজে অবহেলিত। জাতীয় কবির প্রতি এতো অবজ্ঞা, এতো অবহেলা কেন?

 

কবি নজরুলের কবিতা ও গান-গজল আমাদের সংস্কৃতির চিরসম্পদ। তাঁর দেশাত্মবোধক কবিতাগুলো লাখ লাখ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং অনুপ্রাণিত করেছে বীরত্বপূর্ণ ও নিঃস্বার্থ কাজে আত্মনিয়োগ করতে। আমরা যদি নজরুলের জীবন ও সাহিত্য থেকে এই আদর্শটুকু গ্রহণ করতে পারি তাহলে তাঁর আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে। মুসলিম জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য, সভ্যতা-সংস্কৃতি ফিরে পেতে হলে নজরুলকে জানতে হবে এবং সর্বস্তরে নজরুল চর্চা ছড়িয়ে দিতে হবে। নজরুল সাহিত্যকে বর্তমান প্রজন্ম ও আগামি প্রজন্মের সামনে উপস্থাপন করা আমাদের উপর অপরিহার্য কর্তব্য।

 

কবি নজরুল তার বিরল প্রতিভাগুণে অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন এবং যুগ যুগ ধরে আমাদের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। কবির মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাভরে কবিকে স্মরণ করছি এবং তাঁর ত্রæটি-বিচ্যুতির জন্য মহামহিমের দরবারে মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ তায়ালা কবিকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে আসীন করুন।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও শিক্ষক