আজ-  ,


সময় শিরোনাম:
«» কমলগঞ্জে শতভূজা বাসন্তী পূজা সমাপ্ত «» কমলগঞ্জে প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনীর উদ্বোধন «» ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ বিশ্বনাথ উপজেলার কাউন্সিল সম্পন্ন «» শ্রীমঙ্গল শ্রী শ্রী গৌরি শংকর বাবার আশ্রমে বাসন্তী ও দশমহাবিদ্যা মায়ের পুজা অনুষ্ঠিত «» মৌলভীবাজার পৌরসভার দক্ষিণ বড়কাপন জামে মসজিদের রাস্তা ও ড্রেন উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন «» নওগাঁয় সড়কে প্রাণ গেল বাবা-মার,হাসপাতালে ছেলে «» বগুড়া আদমদিঘীতে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালিত «» ২২ কেজি গাঁজাসহ ২ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১২, «» আধুনিক বিশ্বে ইসলামের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দারুল উলুম দেওবন্দকে আল্লাহ কবুল করেছেন: গোয়াইনঘাটের সমাবেশে বক্তারা ★ «» নওগাঁয় ঈদ পুনর্মিলনী বর্ষবরণ পহেলা বৈশাখ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত

শরীআত মুতাবেক দেনমোহর কখন কি ভাবে আদায় করতে হবে

কে এস এম আরিফুল ইসলাম:

মুসলিম বিয়েতে দেনমোহর হচ্ছে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার। দেনমোহর সাধারণত বর ও কনের সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। দেনমোহর হিসেবে যেকোনো পরিমাণ অর্থ নির্ধারণ করা যায়। কিন্তু কোনো অবস্থায়ই স্বামী ন্যূনতম ১০ দিরহাম বা সমপরিমাণ অর্থ অপেক্ষা কম নির্ধারণ করতে পারবেন না। বিয়ের সময় দেনমোহর নির্ধারণ করা না হলে বিয়ের পরও তা নির্ধারণ করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে ন্যায্য দেনমোহর নির্ধারণের সময় সামাজিক মর্যাদা ও বাবার পরিবারের অন্যান্য নারী সদস্যের—যেমন, স্ত্রীর আপন বোন, ফুপু ও ভাইয়ের মেয়ের—দেনমোহরের পরিমাণ বিবেচনা করাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তা ছাড়া প্রয়োজনে আদালতের মাধ্যমে দেনমোহর নির্ধারণ করা যায় কিংবা স্বামী কর্তৃক যেকোনো সময় দেনমোহরের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়। তবে দেনমোহর প্রদান ছাড়া বিয়ে অবৈধ হয়ে যায় না। শর্ত হচ্ছে, বিয়ের পর স্ত্রীকে অবশ্যই উপযুক্ত দেনমোহর প্রদান করতে হবে। অনেক সময় দেনমোহর নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়। অনেক ভ্রান্ত ধারণাও রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, বিবাহবিচ্ছেদের সময় বলা হয়, স্ত্রী নিজ ইচ্ছা থেকে, নিজে উদ্যোগী হয়ে তালাক দিচ্ছেন। এতে যুক্তি তুলে ধরা হয় যে স্ত্রীর দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে না। এটি ভুল ধারণা। স্বামী বা স্ত্রী যে-ই তালাক দিন না কেন, দেনমোহরের টাকা অবশ্যই প্রদান করতে হবে। দেনমোহরের টাকা মাফ করা যায়, তবে সে জন্য কিছু শর্ত আছে। স্ত্রীর পূর্ণ সমর্থন থাকতে হবে এবং কোনো প্রকার প্ররোচিত না হয়ে মাফ করতে হবে। কারও দ্বারা প্রভাবিত হওয়া যাবে না।

বিয়ের সময় স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করা স্বামীর ওপর ফরজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা খুশি মনে স্ত্রীকে মহর পরিশোধ করো।’
(সূরা আন নিসা: ৪)

সূরা নিসার ২৪ নম্বর আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, মোহর হতে হবে বিক্রয়যোগ্য বস্তু সম্পদ। আর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, মোহরের নূন্যতম পরিমাণ হবে দশ দিরহাম। আধুনিক পরিমাপে তা প্রায় ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা।
তবে মোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। নূন্যতম পরিমাণের ঊর্ধ্বে যে কোনো পরিমাণকেই মোহর নির্ধারণ করা যাবে। তবে স্বামী যেহেতু দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য- তাই তার পরিশোধের সামর্থ্য বিবেচনা করে তা নির্ধারণ করা উচিৎ। এমন কোনো সিদ্ধান্ত তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া আদৌ উচিৎ হবে না- যাতে সে গুনাহগার হয়।

দেনমোহরের প্রকারভেদ:-

দেনমোহর প্রথমত দুই প্রকার

১. তাৎক্ষণিক দেনমোহর: তাৎক্ষণিক দেনমোহর স্ত্রীর চাওয়ামাত্র পরিশোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্ত্রী তাৎক্ষণিক দেনমোহর না পাওয়া পর্যন্ত স্বামীর সঙ্গে বসবাস (দাম্পত্য মিলন) করতে অস্বীকার করতে পারেন।

২. বিলম্বিত দেনমোহর: যে দেনমোহর বিবাহবিচ্ছেদ (তালাক) অথবা স্বামীর মৃত্যুর পর পরিশোধ করতে হয়, তাকেই বিলম্বিত দেনমোহর বলে। এ ছাড়া স্বামী সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে স্ত্রী বা স্ত্রীদের দাবিক্রমে বিলম্বিত দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে।

দেনমোহরের একটা অংশ থাকে যা তাৎক্ষনিক, অর্থাৎ স্ত্রী দাবী করা মাত্র দিয়ে দিতে হয় ।
সাধারণত কাবিননামার নির্দিষ্ট কলামে তাৎক্ষনিক দেনমোহরের অংশ উল্লেখ থাকে । অংশ দেওয়া হয়ে গেলে উসুল বলা হয় । মনে করি মোট দেনমোহর চার লক্ষ টাকা । পঞ্চাশ হাজার টাকা তাৎক্ষনিক দেনমোহর হিসেবে ধার্য হলো । এই ধার্যকৃত টাকা দিয়ে দিলে লেখা থাকবে উসুল পঞ্চাশ হাজার টাকা । সাধারণত অলঙ্কার বা অন্যকোন মূল্যবান সামগ্রী প্রদান সাপেক্ষে উসুল দেওয়া হয় ।

অপরদিকে বিলম্বিত দেনমোহর বলতে বুঝায় যা বিলম্বে প্রদান করা হবে ,অর্থাৎ স্ত্রীর চাওয়া মাত্র আদায়যোগ্য নয় ।
বিলম্বিত দেনমোহর আদায়যোগ্য হয় ৩ টি ঘটনা সাপেক্ষে –

১) স্বামী মৃত্যুবরণ করলে
২) বিবাহ বিচ্ছেদ হলে
৩) অনুমতি ছাড়া একাধিক বিয়ে করলে

দেনমোহরের ক্ষেত্রে একটা বিষয় পরিস্কার যে, দেনমোহর মাফ হয় না । অনেক কেইস স্টাডিতে দেখা গেছে, বাসর রাতে স্বামী প্রবর বেশ আবেগে গদ গদ হয়ে ধর্মীয় দোহাই দিয়ে স্ত্রীকে দেনমোহর মাফ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে । সরলা স্ত্রী ইমোশনালী ব্ল্যাক মেইল্ড হয়ে অবগুণ্ঠনে মুখ লুকিয়ে মাফ করে দিয়েছে বটে । কিন্তু তাতে দেনমোহর মাফ হয় না । নারী অথবা পুরুষ তালাক যে – ই দিক না কেন স্ত্রীকে তার প্রাপ্য দেনমোহর বুঝিয়ে দিতে হবে । দেনমোহর আদায়ের জন্য মোহরানা দাবী এবং তা প্রত্যাখ্যান হবার ৩ বছরের মধ্যে মোকদ্দমা করতে হবে । অন্যথায় দাবী তামাদি হয়ে যাবে । তবে স্ত্রী নিজের ইচ্ছায় কোন চাপ প্রয়োগ ছাড়া স্ব ইচ্ছায় মাফ করতে পারেন।

দেনমোহর কতো হবে এটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু ক্রাইটেরিয়া মেইন টেইন করা হয় । যেমন –

• কনের শিক্ষাগত যোগ্যতা , পারিবারিক স্ট্যাটাস
• কনের ফুফু, খালাদের দেনমোহরের পরিমাণ

যদিও এগুলো আইনত বাধ্যতামূলক নয় । তথাপি প্রচলিত সামাজিক নিয়ম হিসেবে এগুলো মেইন টেইন করা হয় ।

মোহরে ফাতেমি ও আমাদের অজ্ঞতা:-

নবীকন্যা হযরত ফাতেমা (রা.) ও হযরত আলী (রা.)-এর বিয়ের সময় ধার্যকৃত মোহর মুসলিম সমাজে মোহরে ফাতেমি নামে পরিচিত।

কিন্তু বর্তমানে অনেক ধার্মিক পরিবার বিয়ের সময় মোহরে ফাতেমি পরিমাণ দেনমোহর নির্ধারণ করে থাকেন। অনেকেই দেনমোহরের জন্য মোহরে ফাতেমিকে সুন্নত বলে মনে করেন কিংবা খুব গুরুত্বের সঙ্গে এটা বিবেচনা করেন। এটা নিছক কুসংস্কার ও ভুল প্রথা বৈ অন্যকিছু নয়।

কেননা, মোহরে ফাতেমি যদি সুন্নতি হতো তবে সাহাবারা মোহরে ফাতেমির চেয়ে কম-বেশি মোহর ধার্য করে বিয়ে করতেন না। যেহেতু সাহাবারা মোহরে ফাতেমিকে অনুসরণ করেননি বরং সামর্থ্য বিবেচনায় বিভিন্ন তারা মোহর নির্ধারণ করেছেন, তাই মোহরে ফাতেমি সুন্নত নয়। বরং দেনমোহর নির্ধারণের জন্য সুন্নত হলো- এমন সর্বোচ্চ পরিমাণ যা পরিশোধ করার সামর্থ্য স্বামীর আছে।

হযরত উমরের (রা.) খেলাফতকালে যখন মুসলমানদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে- তখন সাহাবারা তাদের সন্তানদের বিয়েতে মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক গুণ বেশি মোহর নির্ধাণ করতে শুরু করেন। হযরত উমর (রা.) মোহরের ক্রমবৃদ্ধির গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সূরা নিসার ২০ নম্বর আয়াতের কারণে তা করেননি। কেননা, ওই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়; মোহর অনেক অনেক বেশিও হতে পারে।

তাই, কোনো প্রকার বিচার-বিবেচনা ছাড়া ঢালাওভাবে সবার জন্য মোহরে ফাতেমি নির্ধারণ করলে জটিলতর এমন দু’টি সমস্যা সৃষ্টি হয়- যা ইসলাম আদৌ পছন্দ করে না। স্বামীর যদি মোহরে ফাতেমি পরিশোধের সামর্থ্য না থাকে তবে সে ক্ষেত্রে- স্বামী হয় নির্যাতিত। মোহর পরিশোধ করতে না পারায় সে হয় গুনাহগার।

আবার মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ মোহর পরিশোধের সামর্থ্য যদি স্বামীর থাকে তবে সেক্ষেত্রে মোহরে ফাতেমিকে দেনমোহর নির্ধারণ করার দ্বারা স্ত্রীকে ঠকানো হয় ও নারীত্বের চরম অবমাননা করা হয়। তাই মোহরে ফাতেমিকে নয়, বরং স্বামীর সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ পরিমাণকে দেনমোহর করা উচিৎ। লক্ষ্য করতে হবে, স্বামী যেন গুনাহগার না হয়- আবার স্ত্রীও যেন না ঠকে।

এর পরেও কেউ যদি মোহরে ফাতেমিকে দেনমোহর করতে চায় তবে করতে পারে। নবীকন্যা হজরত ফাতেমার বিয়ের মোহর ছিলো- ৪৮০ দিরহাম। বর্তমানের পরিমাপে তার পরিমাণ প্রায় ১৩১.২৫ ভরি রুপা বা ১৫৩০.৯ গ্রাম রুপা। বাজারদর হিসেবে মূল্য দাঁড়ায়- প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা।

দেনমোহর আদায় করার পদ্ধতি:-

আইন অনুযায়ী দেনমোহর স্বামীকে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। কারণ, দেনমোহর স্ত্রীর আইনগত, একচ্ছত্র অধিকার এবং সব সময়ই স্বামীর ঋণ। স্ত্রী পারিবারিক আদালতে মামলা করে দেনমোহর আদায় করতে পারবেন। দেনমোহর দাবি করার পর স্বামী তা পরিশোধ না করলে স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে পৃথক থাকতে পারবেন এবং ওই অবস্থায় স্বামী অবশ্যই তাঁর ভরণপোষণ করতে বাধ্য থাকবেন। সাধারণত বিয়ের সময় দেনমোহর নির্ধারণ করা হয়। দেনমোহরের কিছু পরিমাণ বিয়ের সময় তাৎক্ষণিক দেনমোহর হিসেবে দেওয়া হয় এবং তা কাবিননামায় লিখিত থাকে। বাকিটা বিলম্বিত দেনমোহর হিসেবে ধরা হয়।

কখন দেনমোহরের অর্ধেক দিতে হবে
বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য মিলন অর্থাৎ সহবাসের আগে বিবাহবিচ্ছেদ হলে কিংবা স্বামীর মৃত্যু হলে সম্পূর্ণ দেনমোহরের অর্ধেক পরিশোধ করতে হবে।

দেনমোহর আদায়ের অধিকার:-

বিবাহবিচ্ছেদ হলে বা বিলম্বিত তালাক হলে অথবা স্বামীর মৃত্যু হলে কোনো স্ত্রী তাঁর বিলম্বিত দেনমোহর আদায়ের জন্য পারিবারিক আদালতে মামলা করে তা আদায় করতে পারেন। তবে তালাক বা স্বামীর মৃত্যুর তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে। স্বামীর মৃত্যু হলে বকেয়া দেনমোহর ঋণের মতো হয়। এটি অবশ্যই শোধ করতে হয়। স্বামীর উত্তরাধিকারীরা এটি প্রদানে বাধ্য। অন্যথায় মৃত স্বামীর উত্তরাধিকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করে তা আদায় করা যায়। স্ত্রী আগে মারা গেলেও দেনমোহর মাফ হয় না। স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা এই দেনমোহরের হকদার। তারাও মামলা করার অধিকার রাখে।

দেনমোহর হলো স্ত্রীর প্রতি সম্মানসূচক স্বামীর একটি আবশ্যিক দেনা। মুসলিম আইন অনুযায়ী দেনমোহর হলো কিছু টাকা বা অন্য কোনো সম্পত্তি যা স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে বিয়ের মূল্যস্বরূপ পাওয়ার অধিকারী হয়। একজন নারীর অধিকারপ্রাপ্তিতে প্রথমেই দেনমোহরপ্রাপ্তির বিষয়টি চলে আসে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা নারীদেরকে তাদের মোহর স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে, সন্তুষ্ট চিত্তে তারা মোহরের কিয়দংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করবে।’ (সুরা আন-নিসা, আয়াত-৪)।

এ ছাড়া কুরআনের আরো এক আয়াতে দেনমোহরের অধিকার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘হে নবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে, যাদের মোহর তুমি প্রদান করেছো।’
(সুরা আল-আহজাব, আয়াত-৫০)

দেনমোহর ইসলামে এমন একটি বিষয়, যার মাধ্যমে স্ত্রীর অধিকার পাকাপোক্ত করা হয়। পরিশোধের ভিত্তিতে দেনমোহর দুই ধরনের হয়। যথা- মুয়াজ্জল (আশু) দেনমোহর এবং মু-অজ্জল (বিলম্বিত) দেনমোহর। আশু দেনমোহর চাওয়ামাত্র পরিশোধ করতে হয়। আর বিলম্বিত দেনমোহর হচ্ছে, দেনমোহরের যে অংশটুকু স্বামীর মৃত্যুর পর, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ে বিচ্ছেদ বা তালাকের পর স্ত্রী পেয়ে থাকেন। প্রচলিত ধারণা রয়েছে যে, তালাকের কারণে দেনমোহর দিতে হয়। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। দেনমোহর বিয়ের শর্ত। তালাকের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।

বিয়ে বিচ্ছেদ হোক বা না হোক দেনমোহর পরিশোধ করা স্বামীর দায়িত্ব:-

দেনমোহর স্ত্রীর অধিকার সংরক্ষণের জন্য এবং স্ত্রী অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দেয়া হয়। এটি মূলত স্বামীর ওপর আইনগত আরোপিত একটি দায়। মানুষের মাঝে একটি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে, বিয়ের রাতে স্বামী চাইলে স্ত্রীর কাছ থেকে দেনমোহর মাফ করিয়ে নিতে পারেন, তবে তা মাফ হয়ে যায়। কিন্তু আইন ও আদালতে এ ধরনের যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। আমাদের দেশে ১৯৬১ সালে প্রণীত মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন (কাবিননামা) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেখানে বিবাহিত নারীদের দেনমোহরের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। স্বামী সেই দেনমোহর দিতে বাধ্য। এই আইনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো প্রথমত: যাতে বিবাহের একটি লিখিত দলিল থাকে, দ্বিতীয়ত: যাতে দেনমোহরানার বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত থাকে। দেনমোহরের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নেই।

দেনমোহর বিয়ের সময় বা বিয়ের পরও নির্ধারণ করা যায়। উপযুক্ত দেনমোহর নির্ধারিত হয় বর-কনের পারস্পরিক ও সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। এতে উভয়পক্ষের অভিভাবকদের সম্মতি থাকে। দেনমোহর নির্ধারণ কম বা বেশিতে আইনগত কোনো বাধা নেই, তবে টাকার অংশ স্বামীর আর্থিক সামর্থ্যরে মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়। দেনমোহরের পরিমাণ এতো বেশি নির্ধারণ করা উচিত নয় যা স্বামীর পক্ষে দেয়া অসম্ভব। স্বামী বা স্বামীর পরিবার উপহার হিসেবে স্ত্রীকে যা দেবে তা অবশ্যই দেনমোহর নয়। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীকে অনেক কিছুই দিতে পারেন। স্বামী যদি দেনমোহর হিসেবে স্ত্রীকে দেন, তবেই তা দেনমোহর বলে বিবেচিত হবে।

সাধারণত, বরপক্ষ উপহার সামগ্রী দিয়ে দেনমোহর পরিশোধ করার পর যখন তারা বিভিন্ন জনের কাছে বলে বেড়ায় মেয়েকে আমরা এতো ভরি স্বর্ণ দিয়েছি কিংবা ফ্ল্যাটবাড়ি বা জমি দিলাম সেক্ষেত্রে এর যথাযথ উত্তর কি হতে পারে? প্রশ্ন জাগে বিয়ের সময়কার গহনা, শাড়ি ইত্যাদি কি দেনমোহরের অংশ হিসেবে ধরা হবে কিনা? বিয়ের সময় গহনা, শাড়ি ইত্যাদির মূল্য দেনমোহরের একটি অংশ ধরে উসুল লিখে নেয়া হয়। সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, গহনা, শাড়ির মূল্য ধরে নিকাহনামার সংশ্লিষ্ট ধারায় উসুল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করলেই তা দেনমোহরের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে যেভাবেই, যতোটুকু পরিমাণে দেয়া হোক না কেন প্রত্যেক মেয়ের উচিত তার দেনমোহর নামক অধিকার বিষয়ে সচেতন হওয়া।

১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন:-

এই আইনের ধারা ১০ এ মোহরানা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, বিবাহের কাবিননামায় কি ধরণের দেনমোহর স্ত্রীর পাওনা হবে, তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা না থাকলে দেনমোহরের সমুদয় অর্থ স্ত্রী চাহিবামাত্রই পরিশোধযোগ্য। যদি সালিশী পরিষদের আদেশ বলে ইহা কার্যকরী হলে স্ত্রীর তা পাওনা হয়ে যায়। উহা পরিশোধ না করলে ১ মাস কারাদন্ড বা ২০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড হতে পারে।
(বাংলাদেশ আইনগত অধিকার)

লেখক:

কে এস এম আরিফুল ইসলাম
সাংবাদিক ও সিনিয়র সহকারী শিক্ষক
দারুল আজহার ইনস্টিটিউট
শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।