আজ-  ,


সময় শিরোনাম:
«» কমলগঞ্জে সরকারি যাকাত ফাণ্ডে যাকাত সংগ্রহ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা «» কমলগঞ্জে চা শ্রমিকের লাশ সৎকার থেকে উদ্ধার করে ময়না তদন্তে «» বগুড়া সান্তাহারে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ একজন গ্রেপ্তার «» বগুড়া আদমদীঘিতে ট্রাকের ধাক্কায় একজন নিহত «» মৌলভীবাজার দুর্লভপুর এলাকায় পাইপ ও গ্যাসের রাইজার লাইন ঝুকিপূর্ণ : অগ্নি দুর্ঘটনা‘র আশংকা «» Destructive;Anarchy and Insecurity Will Increase On the Roads: TIBDhaka «» ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ মৌলভীবাজার পৌর শাখার বদর দিবসের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত «» ভোক্তা-অধিকার অধিদপ্তর কর্তৃক তদারকি অভিযান ও জরিমানা «» নওগাঁয় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০২৪ উদযাপন «» মৌলভীবাজারের জুড়ীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠে একই পরিবারের ৫জন নিহত ও গুরুতর আহত-১

ইসলামী শরীয়তে মহরে ফাতেমি কতটুকু  ও আমাদের অজ্ঞতা কোথায়

কে এস এম আরিফুল ইসলাম:

মুসলিম বিয়েতে দেনমোহর হচ্ছে স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীর একটি বিশেষ অধিকার। দেনমোহর সাধারণত বর ও কনের সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। দেনমোহর হিসেবে যেকোনো পরিমাণ অর্থ নির্ধারণ করা যায়। কিন্তু কোনো অবস্থায়ই স্বামী ন্যূনতম ১০ দিরহাম বা সমপরিমাণ অর্থ অপেক্ষা কম নির্ধারণ করতে পারবেন না। বিয়ের সময় দেনমোহর নির্ধারণ করা না হলে বিয়ের পরও তা নির্ধারণ করা যায়। তবে সে ক্ষেত্রে ন্যায্য দেনমোহর নির্ধারণের সময় সামাজিক মর্যাদা ও বাবার পরিবারের অন্যান্য নারী সদস্যের—যেমন, স্ত্রীর আপন বোন, ফুপু ও ভাইয়ের মেয়ের—দেনমোহরের পরিমাণ বিবেচনা করাকে প্রাধান্য দিতে হবে। তা ছাড়া প্রয়োজনে আদালতের মাধ্যমে দেনমোহর নির্ধারণ করা যায় কিংবা স্বামী কর্তৃক যেকোনো সময় দেনমোহরের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়। তবে দেনমোহর প্রদান ছাড়া বিয়ে অবৈধ হয়ে যায় না। শর্ত হচ্ছে, বিয়ের পর স্ত্রীকে অবশ্যই উপযুক্ত দেনমোহর প্রদান করতে হবে। অনেক সময় দেনমোহর নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়। অনেক ভ্রান্ত ধারণাও রয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, বিবাহবিচ্ছেদের সময় বলা হয়, স্ত্রী নিজ ইচ্ছা থেকে, নিজে উদ্যোগী হয়ে তালাক দিচ্ছেন। এতে যুক্তি তুলে ধরা হয় যে স্ত্রীর দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে না। এটি ভুল ধারণা। স্বামী বা স্ত্রী যে-ই তালাক দিন না কেন, দেনমোহরের টাকা অবশ্যই প্রদান করতে হবে। দেনমোহরের টাকা মাফ করা যায়, তবে সে জন্য কিছু শর্ত আছে। স্ত্রীর পূর্ণ সমর্থন থাকতে হবে এবং কোনো প্রকার প্ররোচিত না হয়ে মাফ করতে হবে। কারও দ্বারা প্রভাবিত হওয়া যাবে না।

বিয়ের সময় স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করা স্বামীর ওপর ফরজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তোমরা খুশি মনে স্ত্রীকে মহর পরিশোধ করো।’
(সূরা আন নিসা: ৪)

সূরা নিসার ২৪ নম্বর আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, মোহর হতে হবে বিক্রয়যোগ্য বস্তু সম্পদ। আর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, মোহরের নূন্যতম পরিমাণ হবে দশ দিরহাম। আধুনিক পরিমাপে তা প্রায় ৩০.৬১৮ গ্রাম রুপা।
তবে মোহরের সর্বোচ্চ কোনো পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়নি। নূন্যতম পরিমাণের ঊর্ধ্বে যে কোনো পরিমাণকেই মোহর নির্ধারণ করা যাবে। তবে স্বামী যেহেতু দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য- তাই তার পরিশোধের সামর্থ্য বিবেচনা করে তা নির্ধারণ করা উচিৎ। এমন কোনো সিদ্ধান্ত তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া আদৌ উচিৎ হবে না- যাতে সে গুনাহগার হয়।

দেনমোহরের প্রকারভেদ:-

দেনমোহর প্রথমত দুই প্রকার

১. তাৎক্ষণিক দেনমোহর: তাৎক্ষণিক দেনমোহর স্ত্রীর চাওয়ামাত্র পরিশোধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্ত্রী তাৎক্ষণিক দেনমোহর না পাওয়া পর্যন্ত স্বামীর সঙ্গে বসবাস (দাম্পত্য মিলন) করতে অস্বীকার করতে পারেন।

২. বিলম্বিত দেনমোহর: যে দেনমোহর বিবাহবিচ্ছেদ (তালাক) অথবা স্বামীর মৃত্যুর পর পরিশোধ করতে হয়, তাকেই বিলম্বিত দেনমোহর বলে। এ ছাড়া স্বামী সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে স্ত্রী বা স্ত্রীদের দাবিক্রমে বিলম্বিত দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে।

মোহরে ফাতেমি ও আমাদের অজ্ঞতা:-

নবীকন্যা হযরত ফাতেমা (রা.) ও হযরত আলী (রা.)-এর বিয়ের সময় ধার্যকৃত মোহর মুসলিম সমাজে মোহরে ফাতেমি নামে পরিচিত।

কিন্তু বর্তমানে অনেক ধার্মিক পরিবার বিয়ের সময় মোহরে ফাতেমি পরিমাণ দেনমোহর নির্ধারণ করে থাকেন। অনেকেই দেনমোহরের জন্য মোহরে ফাতেমিকে সুন্নত বলে মনে করেন কিংবা খুব গুরুত্বের সঙ্গে এটা বিবেচনা করেন। এটা নিছক কুসংস্কার ও ভুল প্রথা বৈ অন্যকিছু নয়।

কেননা, মোহরে ফাতেমি যদি সুন্নতি হতো তবে সাহাবারা মোহরে ফাতেমির চেয়ে কম-বেশি মোহর ধার্য করে বিয়ে করতেন না। যেহেতু সাহাবারা মোহরে ফাতেমিকে অনুসরণ করেননি বরং সামর্থ্য বিবেচনায় বিভিন্ন তারা মোহর নির্ধারণ করেছেন, তাই মোহরে ফাতেমি সুন্নত নয়। বরং দেনমোহর নির্ধারণের জন্য সুন্নত হলো- এমন সর্বোচ্চ পরিমাণ যা পরিশোধ করার সামর্থ্য স্বামীর আছে।

হযরত উমরের (রা.) খেলাফতকালে যখন মুসলমানদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে- তখন সাহাবারা তাদের সন্তানদের বিয়েতে মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক গুণ বেশি মোহর নির্ধাণ করতে শুরু করেন। হযরত উমর (রা.) মোহরের ক্রমবৃদ্ধির গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সূরা নিসার ২০ নম্বর আয়াতের কারণে তা করেননি। কেননা, ওই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়; মোহর অনেক অনেক বেশিও হতে পারে।

তাই, কোনো প্রকার বিচার-বিবেচনা ছাড়া ঢালাওভাবে সবার জন্য মোহরে ফাতেমি নির্ধারণ করলে জটিলতর এমন দু’টি সমস্যা সৃষ্টি হয়- যা ইসলাম আদৌ পছন্দ করে না। স্বামীর যদি মোহরে ফাতেমি পরিশোধের সামর্থ্য না থাকে তবে সে ক্ষেত্রে- স্বামী হয় নির্যাতিত। মোহর পরিশোধ করতে না পারায় সে হয় গুনাহগার।

আবার মোহরে ফাতেমির চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ মোহর পরিশোধের সামর্থ্য যদি স্বামীর থাকে তবে সেক্ষেত্রে মোহরে ফাতেমিকে দেনমোহর নির্ধারণ করার দ্বারা স্ত্রীকে ঠকানো হয় ও নারীত্বের চরম অবমাননা করা হয়। তাই মোহরে ফাতেমিকে নয়, বরং স্বামীর সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ পরিমাণকে দেনমোহর করা উচিৎ। লক্ষ্য করতে হবে, স্বামী যেন গুনাহগার না হয়- আবার স্ত্রীও যেন না ঠকে।

এর পরেও কেউ যদি মোহরে ফাতেমিকে দেনমোহর করতে চায় তবে করতে পারে। নবীকন্যা হজরত ফাতেমার বিয়ের মোহর ছিলো- ৪৮০ দিরহাম। বর্তমানের পরিমাপে তার পরিমাণ প্রায় ১৩১.২৫ ভরি রুপা বা ১৫৩০.৯ গ্রাম রুপা। বাজারদর হিসেবে মূল্য দাঁড়ায়- প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা।

মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে ইসলামী শরীআত মোতাবিক দাম্পত্যজীবন অতিবাহিত করার তৌফিক দান করোণ।

লেখক:
কে এস এম আরিফুল ইসলাম
সাংবাদিক ও সিনিয়র সহকারী শিক্ষক
দারুল আজহার ইনস্টিটিউট
শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার।