আজ-  ,


সময় শিরোনাম:
«» গ্লোবাল জাালাবাদ এসোসিয়েশনের ভ্যাচুয়ালি ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও বাংলা নববর্ষ উদযাপন «» শমশেরনগর হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তিতে দাতা সদস্যদের সাথে লন্ডনে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত «» সিলেটের জৈন্তায় বজ্রপাতে মসজিদের ইমামের মৃত্যু «» বগুড়া আদমদীঘিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা «» গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা” শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত «» সত্য প্রকাশ আপোষহীন -সংবাদ ও সাংবাদিকতায় ইসলামের নির্দেশনা____মোয়াজ্জেম চৌধুরী «» গ্রেটার সিলেট ইউকের কেন্দ্রীয় ফাউন্ডার্স ট্রেজারার এর সাথে সাউথ ওয়েলস রিজিওনাল কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত «» ভারতে আলোর দিশারী হযরত মুহাম্মদ স. গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন «» মৌলভীবাজারে গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত «» আর নয় বৃদ্ধাশ্রম-কৃষক শ্রমিক জেলে তাঁতী, পেনশন স্কিমে সবাই মাতি

সৈয়দ নাজমুল ইসলাম লুকু: মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এক নেপথ্য নায়ক

সৈয়দ মারুফ, ইউকেঃ তিনি ১৯৭১ সালের ৫ই মার্চ একটি পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে পাকিস্তানের পতাকা জ্বালিয়েছেন আবার ওই জায়গায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা টাঙিয়ে দিয়েছেন। পাক জান্তাদের হুলিয়া মাথায় নিয়ে ২৫শে মার্চের আগেই দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন।যুদ্ধকালীন সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের কলকাতা মিশনে বিনা বেতনে কাজ করেছেন আবার দেশ থেকে টাকা নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতাও করেছেন।

যাকে নিয়ে এই কথাগুলো বলা হচ্ছে তিনি আর কেউ নন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এক নেপথ্য নায়ক সৈয়দ নাজমুল ইসলাম লুকু।

কিন্ত তিনি ইউকে থাকার কারনে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম নিবন্ধন হয়নি এমনকি তিনি একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা হিসাবে কোন ধরনের সুযোগ সুবিধাও পাচ্ছেননা

পৈতৃক নিবাস মৌলভীবাজারের বড়লেখায় হলেও সৈয়দ নাজমুল ইসলাম লুকুর জন্ম ১৯৫২ সালের ১লা জানুয়ারী পিতার ব্যবসায়িক কর্মক্ষেত্র কমলগঞ্জের শমশেরনগরের এয়ারপোর্ট রোডস্থ বাসভবনে।

লেখাপড়ার হাতেখড়ি শমশেরনগরের আধুনা নামলুপ্ত রামচিজ রাম প্রাইমারী স্কুলে। এরপর এস এস সি সমশেরনগরের এ এটি এম হাই স্কুল থেকে।
১৯৬৯ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের অগ্নিঝরা দিনে তিনি বৃহত্তর সিলেটের স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের সূতিকাগার বলে পরিচিত মদন মোহন কলেজের ছাত্র। ৬৯ সালেই তিনি বাণিজ্য বিষয়ে মদনমোহন কলেজ থেকে এইস এস সি পাশ করে চট্টগ্রাম বাণিজ্য কলেজে ডিগ্রি ক্লাসে ভর্তি হন।

৩রা মার্চ ঢাকায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে সামনে রেখে চারিদিকে থমথমে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। ইতিমধ্যেই চট্টগ্রামে পাক সামরিক জান্তা অস্ত্র মজুদ করা শুরু করে দিয়েছে। বাঙালী ও অবাঙালী দাঙ্গা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এমনি এক সময়ে ৪ঠা মার্চ জনাব লুকু চট্টগ্রাম থেকে শমশেরনগরে চলে আসেন।
৫ই মার্চ শমশেরনগরে সর্বদলীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার মানুষ উক্ত সমাবেশে যোগদান করে। সমাবেশ শেষে শুরু হয় মিছিল। মিছিলটি যখন শমশেরনগর চৌমুহনা অতিক্রম করছে ঠিক ওই সময়ে শমশেরনগরের অসীম সাহসী কয়েকজন তরুণ এম এ রহিম ,নারায়ন ,সুকুমার ও লুকু স্থানীয় পুলিশফাঁড়ির নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে ভেতরে ঢুকে যান। স্বল্প সময়ের জন্য হলেও শমশেরনগরের পুলিশফাঁড়ি তাঁদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ফাঁড়িতে টাঙানো পাকিস্তানের পতাকা তাঁরা নামিয়ে দেন। টাঙিয়ে দেন লাল সবুজের পতাকা।

ঢাকার বাইরে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম পতাকা উত্তোলনের গৌরব অর্জনকারীদের এক জন হয়ে ইতিহাসের এক বিরল সম্মানের পাত্র হয়ে উঠেন জনাব সৈয়দ নাজমুল ইসলাম লুকু।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘অগ্নিগর্ভা শমসেরনগর’এর সংগ্রামী উপখ্যান ইতিহাসের এক স্বর্ণোজ্বল অধ্যায় হিসাবে বিবেচিত আর এই শমশেরনগরকে স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে উজ্জীবিত করতে এর সূচনা লগ্নে যে ক’জন মানুষের অবদান ইতিহাসের পাতায় জ্বল জ্বল করে জ্বলছে সৈয়দ নাজমুল ইসলাম লুকু হচ্ছেন তাঁদেরই একজন।
৫ই মার্চের ঘটনার প্রেক্ষিতে ৬ই মার্চ এম এ রহিম ,নারায়ন ,লুকু ও সুকুমার এর উপর হুলিয়া জারি হয়। ইতিমধ্যেই এম এ রহিম ও নারায়ণকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

পুলিশ হন্যে হয়ে সৈয়দ নাজমুল ইসলাম লুকুকে খুঁজতে থাকে এমতাবস্থায় উপায়ন্তর না দেখে আত্মীয় স্বজন ও সমশেরনগরের নেতৃবৃন্দের পরামর্শে ২৫ শে মার্চের পূর্বেই জনাব লুকু চাতলাপুর সীমান্ত ফাঁড়ি অতিক্রম করে ভারতের করিমগঞ্জে প্রবেশ করেন।
কিছু দিন কাছাড় ,করিমগঞ্জ ও কৈলাশহরে বাস করে চলে যান কলিকাতা। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে পুরোদমে যুদ্ধ চলছে। কলিকাতার পাকিস্তান উপ হাইকমিশন বাংলাদেশ মিশনে রূপান্তরিত হয়েছে। জনাব সৈয়দ নাজমুল ইসলাম লুকু কলিকাতাস্থ বাংলাদেশ মিশনে কাজ নেন এবং বিনা পারিশ্রমিকে এর দৈনন্দিন কার্য সম্পাদনে সহযোগিতা করেন।

তিনি তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরীর (পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ) পরামর্শে গোপনে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এলাকায় এসে তিনি তাঁর প্রবাসী আত্নীয় স্বজনের এবং পরিবারের সঞ্চিত অর্থ নিয়ে পুনরায় দেশত্যাগ করে সমুদয় অর্থ প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধ তহবিলে দান করেন।
দেশ স্বাধীন হবার পর জনাব লুকু চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ থেকে বি কম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে লন্ডন আসেন এবং বেশ কিছুদিন সেন্ট্রাল লন্ডন কলেজে লেখা পড়া করেন।

ইতিমধ্যেই তিনি ব্রিটেনে স্থায়ী হয়ে যান এবং স্কটল্যান্ড গিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। অত্যন্ত সফল ব্যবসায়ী জনাব লুকু ১৯৮৭/৮৮সেশনে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন স্কটল্যান্ডের সহসভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

প্রচার ও মিডিয়া বিমুখ মানুষটি দেশে বিদেশে অসংখ্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। ব্যক্তি জীবনে তিনি দুই পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক এবং বর্তমানে লন্ডনেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।